ঢাকা : চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ অত্যন্ত কম ছিল। এপ্রিল মাসে সেটি বাড়তে শুরু করে, জুন মাসে সেটি অব্যাহতভাবে বেড়ে যায় এবং জুলাই মাসে এসে সংখ্যাটি যে কোনো সময়ের থেকে সবচেয়ে বেশি হয়ে যায়। জুলাই মাসে ইতিমধ্যেই সংক্রমণের সংখ্যা ২ লাখ ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৯ হাজার ২৭৪ জনের। একই সময় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১১ হাজার ২৯১ জন। সবমিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৫ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে ১০ হাজার ৫৮৪ জন। এপর্যন্ত মোট সুস্থ ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৩ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৫৮৪ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৩ জন। এসময় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৯৭২ জনের। পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৫৮৭টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ০৪ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার ২৮১টি। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ঢাকা বিভাগেরই ৬৯ জন। এছাড়া খুলনায় ৫০, চট্টগ্রামে ৪০, রাজশাহীতে ২১, বরিশালে ৬, সিলেটে ১১, রংপুরে ১৬ এবং ময়মনসিংহে ১৫ জন মারা গেছেন। আর মারা যাওয়াদের মধ্যে ১২৫ জন পুরুষ এবং ১০৩ জন নারী। এদের মধ্যে ১৪ জন বাসায় মারা গেছেন। বাকিরা হাসপাতালে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মোট মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ১৯৯ জন এবং নারী ৬ হাজার ৭৫ জন।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ১১১ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের ৫০, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ৩৪, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ২২, ২১ থেকে ৩০ বছরের ৮, ১১ থেকে ২০ বছরের ২ এবং ১০ বছরের কম বয়সী ১ জন মারা গেছেন।
এদিকে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রোববার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঈদের ছুটিতে নমুনা পরীক্ষা কম হলেও করোনাভাইরাসের শনাক্তের হার বেড়েছে। সংক্রমণের যে ঊর্ধ্বগতি, চলমান লকডাউন সফল করার মাধ্যমে তার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডা. নাজমুল বলেন, সাত দিনের করোনা পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে নমুনা সংগ্রহ কম হয়েছে, সে হিসাবে পরীক্ষাও কম হয়েছে। এর ফলে মোট রোগীর সংখ্যা কমেছে। তবে শতকরা হিসাবে সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের নিচে নামেনি।
পরিসংখ্যান অনুসারে ২৪ জুলাই ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জুলাই সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে ২৩১ জনের। সবচেয়ে কম মারা গেছেন ২৩ জুলাই ১৬৬ জন। ২৯তম এপিডেমিক সপ্তাহে ২৪ জুলাই পর্যন্ত দুই লাখ দুই হাজার ১১৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগের সপ্তাহের তুলনায় পরীক্ষার হার ২৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমেছে। ঈদের বন্ধের কারণে এই সংখ্যা কমতে পারে। তবে সুস্থতার হার ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়েছে।
জেলাভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনায় নাজমুল ইসলাম বলেন, শনাক্তের হিসাবে ঢাকা জেলা শীর্ষে অবস্থান করছে। ঢাকায় ইতিমধ্যে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তারপর আছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা ও ফরিদপুর। সবচেয়ে কমসংখ্যক রোগী চিহ্নিত হয়েছে রাজশাহীতে ১৮ হাজার ৪১৬ জন। বিভাগভিত্তিক মৃত্যুর হারেও এগিয়ে আছে ঢাকা। এরপরই রয়েছে খুলনা বিভাগ। এছাড়া এক সপ্তাহের মধ্যে ১৯ জুলাই করোনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে ২৩১ জনের। সবচেয়ে কমসংখ্যক প্রাণহানি ঘটেছে ২৩ জুলাই ১৬৬ জন। শনিবারও আমরা করোনায় ১৯৫টি মূল্যবান প্রাণ হারিয়েছি।
জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ অত্যন্ত কম ছিল। এপ্রিল মাসে সেটি বাড়তে শুরু করে, জুন মাসে সেটি অব্যাহতভাবে বেড়ে যায় এবং জুলাই মাসে এসে সংখ্যাটি যে কোনো সময়ের থেকে সবচেয়ে বেশি হয়ে যায়। জুলাই মাসে ইতিমধ্যেই সংক্রমণের সংখ্যা ২ লাখ ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে।
অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ঢাকা মহানগরীতে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে করোনা ডেডিকেটেড যে হাসপাতালগুলো রয়েছে তাতে পাঁচ হাজার ৭১৭টি শয্যা আছে। তার মধ্যে এক হাজার ৯৬৩টি শয্যা শনিবার পর্যন্ত খালি ছিল। রাজধানীতে কোভিড ডেডিকেটেড আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৮৯৮টি, তার মধ্যে শনিবার খালি ছিল ১৩৭টি। সারা দেশে করোনা ডেডিকেটেড সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে সর্বমোট ১৫ হাজার ৬৩০টি সাধারণ শয্যা আছে। সেগুলোর মধ্যে পাঁচ হাজার ৮৯৪টি শয্যা খালি ছিল।
নাজমুল ইসলাম আরো বলেন, সংক্রমণের যে ঊর্ধ্বগতি আছে, লকডাউন সেটিকে টেনে ধরতে পারবে। সংক্রমণ কমাতে লকডাউন একটি কার্যকর পদ্ধতি। এর পাশাপাশি যাদের টিকা নিতে নিবন্ধন হয়েছে, যারা টিকা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত আছেন কিন্তু যারা রেজিস্ট্রেশন করেননি, তারা অবিলম্বে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেন এবং দ্রুত টিকা গ্রহণ করেন।
সোনালীনিউজ/এমটিআই