ঢাকা : দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের ৫ম দিন চলছে আজ। গত চার দিনের তুলনায় মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর সড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা গেছে। অফিসগামীরা ভাড়া ভাগাভাগি করে রিকশায় চড়ছেন। পাড়া-মহল্লার দোকানপাটগুলোও আস্তে আস্তে খুলছে।
অন্যদিকে, সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের তল্লাশি অব্যাহত আছে। তল্লাশি ছাড়াও বিভিন্ন সিগন্যালে গাড়িগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ রয়েছে। সঙ্গে চলছে রিকশা, মোটরসাইকেল, অফিস বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক। ট্রাফিক পুলিশের ব্যাপক তল্লাশির ফলে চেকপোস্টগুলোয় গাড়ির জটলা সৃষ্টি হয়েছে। তবুও পুলিশ প্রতিটি গাড়ির যাত্রীদের তল্লাশি করছে। যারা অযথা বাইরে বের হয়েছেন বা সন্তোষজনক জবাব দিতে পারছেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।
চলমান কঠোর বিধিনিষেধে সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকার কথা থাকলেও কিছু কিছু অফিস খোলা রয়েছে। খোলা রয়েছে ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ফলে গত রোববার থেকে সড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীতে বৃষ্টি শুরু হলে পথচারীদের বিভিন্ন দোকানের শেডের নিচে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। একান্ত জরুরি প্রয়োজন যাদের, তাদের বৃষ্টি থেকে বাঁচতে পর্দা টেনে রিকশায় চড়তে দেখা গেছে। বৃষ্টিতে কিছু সময়ের জন্য ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল চেকপোস্টগুলো। বৃষ্টি কমার পরে আবারও শুরু হয় পুলিশের তল্লাশি।
বাংলামোটর সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা শফিকুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘এটার নাম লকডাউন! সড়কে দেখেন কত গাড়ি চলছে। পুলিশের কোনো বাধা নেই। নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা না করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কষ্টে পড়ে মানুষগুলো সড়কে নামছে। তাই পুলিশ কিছুই করতে পারছে না। এভাবে টানা লকডাউন থাকলে মানুষ না খেয়ে মরে যাবে।’
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কারওয়ান বাজারে কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, ‘লকডাউনে রাস্তায় চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলেও অনেকে বিনা প্রয়োজনেও রাস্তায় বের হচ্ছেন। আমরা এমন ক্ষেত্রে জরিমানা করছি। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছেন। তবে জরুরি সেবায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা অবাধে চলাচল করতে পারছেন।’
এ বিষয়ে রমনা ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. রেফাতুল ইলসলাম বলেন, ‘রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করেও দিনের পর দিন সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ নিশ্চিতে মাঠে থেকে কাজ করছে পুলিশ সদস্যরা। সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এবং দুপুর ২টা থেকে সড়কে যতক্ষণ গাড়ির চাপ থাকে ততক্ষণ দুটি শিফটে কাজ করছে। বৃষ্টির জন্য ট্রাফিক সদস্যদের রেইন কোট ও ছাতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ নিশ্চিতে চতুর্থ দিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাইরে বের হয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) হাতে গ্রেফতার হন ৫৬৬ জন। আর ১৬৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয় এক লাখ ২৬ হাজার ২০০ টাকা।
এছাড়া ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক ৪৪৩টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয় ১০ লাখ ২২ হাজার টাকা। চার দিনে রাজধানীতে মোট গ্রেফতার হয়েছেন এক হাজার ৯৩৯ জন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ