বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, মিলছে না সহায়তা

  • নিজস্ব প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২১, ১১:২৩ এএম
ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা : দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, দেশের ১৩ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা  অব্যাহত থাকতে পারে। নদীগুলোর এ অবস্থার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের ১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার শঙ্কা জানিয়েছে সংস্থাটি।

এসব জেলার কোনো কোনো অঞ্চলে আগে থেকেই বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার কথা বলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানির স্রোতে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি, রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অনেক জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি নদীভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে।

বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় খাবার ও সুপেয় পানিসহ নানামুখী সংকট তৈরি হয়েছে। কিন্তু এসব এলাকার মানুষের কাছে এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। প্রতিদিনই নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন নিম্নাঞ্চলের মানুষেরা। ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় অনেকে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি কিংবা রাস্তার পাশে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু নিয়ে চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে তাদের।

উজানের পাহাড়ি ঢল আর টানা বর্ষণে টাঙ্গাইলের যমুনা ধলেশ্বরীসহ সব কয়টি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতি, ভূঞাপুর, গোপালপুর ও নাগরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে উপজেলার আলিপুর, ভৈরববাড়ি, সদর উপজেলার পৌলীসহ বিভিন্ন এলাকায়।

জানা গেছে, চলতি বছরে কালিহাতি উপজেলার আলিপুর, ভৈরব বাড়ি, বেলটিয়া এলাকায় তিন শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে অনেকেই এখন সর্বস্বান্ত।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, ঘরবাড়ি, জিনিসপত্র সরানোর মতো সময় পাননি তারা। তার আগেই চারদিকে পানি উঠে যায়। তাদের জিনিসপত্রও ভেসে গেছে নদীগর্ভে। পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত এসব অঞ্চলের মানুষের কাছে কোনো ধরনের ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি। টাঙ্গাইলের কালিহাতির গোহালিয়াবাড়ি ইউপি সদস্য আব্দুল খালেক বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আমরা জানিয়েছি, তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখন পর্যন্ত আমরা সরকারি সহায়তাও পাইনি।

তবে ভাঙনের খবর পেয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বোর্ড। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, পানি সমতলটা হ্রাস পেলে ভাঙন আরো ভয়াবহ রূপ নেবে। তখন আমরা গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো ভরাট করার জন্য আপৎকালীন জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করব। 

টাঙ্গাইল জেলার জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ইতোমধ্যে ৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বন্যায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এমন প্রত্যেক পরিবারের জন্য তাৎক্ষণিক ৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা বরাদ্দ করেছি।

এদিকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পদ্মা ও যমুনা নদীতে বাড়ছে পানি। বগুড়ার সারিয়াকান্দিসহ ৩ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাড়িঘরে কোমর পানি, তলিয়ে গেছে ফসলি জমিও।

এদিকে শরীয়তপুরেও শত শত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে মানবেতর দিন পার করছে শত শত পরিবার।

স্থানীয়রা জানান, পানির মধ্যে তাদের বাড়িঘর পড়ে গেছে। তারা এখন কী করবে, কোথায় যাবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা। বন্যা থেকে বাঁচতে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিলেও সেখানে তাদের থাকতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।

যদিও জনপ্রতিধিদের অনেকেই ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার দাবি করেন। দ্রুত দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের আশ্বাস দিয়েছেন সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়া। তিনি বলেন, এরই মধ্যে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। আমাদের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমরা পয়ঃনিষ্কাশন, সুপেয় পানি এবং স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে স্যালাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়ার চন্দনবাইসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন দুলাল বলেন, বন্যার্তদের জন্য মাত্র ২ টন চাল পাইছি, কিন্তু দেওয়ার সাহস পাচ্ছি না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, তাদের পর্যবেক্ষণাধীন ৪৪ স্টেশনে গত সোমবার থেকে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদী যমুনায় সবচেয়ে বেশি পানি। ফলে বিভিন্ন জেলায় এই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের দৈনিক রিপোর্টে জানিয়েছে, যমুনা নদী সোমবারও দেশের আটটি স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, পোড়াবাড়ি, মথুরা ও আরিচায় এই নদী বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। এই স্টেশনগুলোর মধ্যে কাজীপুর, সারিয়াকান্দি ও সিরাজগঞ্জে যমুনা বিপৎসীমার যথাক্রমে ৩১, ৩২ ও ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অন্যান্য স্টেশনে যমুনা বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটারের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপরদিকে দেশের প্রধান ও শক্তিশালী নদী পদ্মা গোয়ালন্দে সর্বোচ্চ ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ধলেশ্বরী এলাসিনে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার, আত্রাই বাঘাবাড়ীতে ৪০ সেন্টিমিটার, চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র ২৬ সেন্টিমিটার, ধরলা কুড়িগ্রামে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী এবং ফরিদপুরের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। এই জেলাগুলোর সব বড় নদীর সাথে যুক্ত এবং নদীগুলো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে বলেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ