ঢাকা: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, হারাম কিছু খেলে নামাজ হবে না, ঘুষ খেলে নামাজ হবে না। প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়ান সারা দিন কী করলেন।
এসময় সব দেশেই সম্পদ সীমিত উল্লেখ করে সম্পদের সঠিক ব্যবহারের জন্য প্রকল্প পরিচালকদের নির্দেশ দেন তিনি।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ভবনে স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহের প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় এলজিইডি’র ৭৬ জন প্রকল্প পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্প পরিচালকদের উদ্দেশ্যে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমাদের ধর্মে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, হারাম খেলে নামাজ হবে না। শুধু তাই নয় হারাম টাকায় কেনা কোনো পোশাক যদি অন্য পোশাক স্পর্শ করে তবে নাপাক হয়ে যাবে। প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়ান সারা দিন কী কাজ করলেন। নিজেকে প্রশ্ন করুন। আমি যতদূর জানি এলজিইডি প্রকল্পে আইন-কানন মেনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। তারপরও আইনের মধ্যে থেকে অনেক কিছু করা হয় আমি খবর রাখি। এখন আরো সঠিকভাবে খোঁজ-খবর রাখবো কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে রেহায় নেই।
‘আপনারা প্রকৌশলী আমি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম আমিও হাফ প্রকৌশলী। সরকার আমাদের বেতন অনেক বাড়িয়েছে তারপরও যদি কেউ চুরি করে ধরা পড়লে সরাসরি অ্যাকশন নেওয়া হবে।’
এলজিইডি’র প্রকল্প পরিচালকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আপনাদের কারণে স্যারকে (স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম) প্রধানমন্ত্রীর কাছে অপদস্ত হতে হচ্ছে। স্যারতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করে না। প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন আপনারা। এখনো পর্যন্ত এলজিইডি একটা মাস্টারপ্ল্যান করতে পারলো না। এলজিইডিকে অবশ্যই একটা মাস্টার প্ল্যান করতে হবে। এলজিইডি’র কাজ নিয়ে অনেক আপত্তি আছে। কাজের মধ্যে অবশই স্বচ্ছতা আনতে হবে।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমি দীর্ঘ ৭ বছর সেতু বিভাগের সচিব ছিলাম। তখন পদ্মাসেতু প্রকল্প নেওয়া হয়। পদ্মাসেতু প্রকল্পের সঠিক ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়। পদ্মাসেতু প্রকল্প দেশের জন্য বাস্তবায়নের ল্যান্ডমার্ক। ২০১২ সালে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। মূল সেতুর ব্যয় ১২ হাজার ৭শ কোটি টাকা। এর থেকে ব্যয়ের খুব বেশি তারতম্য হয়নি। অনেক প্রকল্প ফিজিবিলিটি স্টাডি না করেই নেওয়া হয়। ফলে প্রকল্পের সময়-ব্যয় বৃদ্ধি পায় এটাও এক ধরনের দুর্নীতি বলে দাবি করেন তিনি। ’ তিনি আরো বলেন, সঠিক ফিজিবিলিটি স্টাডি করে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে সময়-ব্যয় বেশি বাড়ছে না। কিন্তু এলজিইডি থেকে অনেক প্রকল্প ফিজিবিলিটি স্টাডি করে নেওয়া হচ্ছে ফলে সময় ও ব্যয় বাড়ছে। ছোট প্রকল্পে কেন বার বার সময় ব্যয় বাড়াতে হবে। বার বার প্রকল্প সংশোধন করলে তাকে ব্যয় বহন করতে হবে বলে জানান তিনি।
প্রকল্প কেন বার বার সংশোধন করতে হবে? সঠিকভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি করেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এলজিইডির কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুর্নীতি করলে আমি এখন থেকে ধরবো। পারচেজও এখন অনেক শতর্কভাবে কাজ করা হচ্ছে দুনীতি ধরতে পারলে ক্ষমা নেই। ’
মতবিনিময় সভার সময় ক্ষুব্ধ হবে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল (এনআইএস) ও প্রকল্পেরে সংজ্ঞা জানতে চান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তবে অনেক পিডি আশানুরুপ উত্তর দিতে পারেননি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিইডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী প্রমুখ।
সোনালীনিউজ/আইএ