ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১, ০৬:৪৮ পিএম

ঢাকা : মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেওয়া লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। ধারদেনায় চলেছে কারো সংসার। অনেকে বাসাভাড়া, দোকানভাড়া, সন্তানের স্কুলের বেতন আটকে গেছে। এতে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েন এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

গত ১২ আগস্ট লকডাউন তুলে দেয় সরকার। এতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের দোকানপাট খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ফলে দীর্ঘ বিরতির পর ফুটপাতে আবারও দোকান খোলার সুযোগ পান গুলিস্তানের ফুটপাত, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল সড়ক মার্কেট, গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সসহ আশপাশের দোকানিরা। শুরুতে ক্রেতা কম এলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ক্রেতার সংখ্যা। করোনার আগে গুলিস্তানজুড়ে এসব দোকানে প্রতিদিন যেখানে প্রায় কোটি টাকার কেনাবেচা হতো, এখন সেখানে তার সিকি ভাগও হচ্ছেনা। তবে হাল ছাড়েননি, আবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা।

ফুটপাত, পাতাল সড়ক মার্কেটসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শিশু ও কিশোরী থেকে শুরু করে যুবক, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ সব ক্রেতাই এসেছে তাদের পছন্দের ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য। ঢাকার ব্যস্ততম গুলিস্তানের ফুটপাত নিম্নআয়ের মানুষের কেনাকাটার মূল জায়গা। যার যা প্রয়োজন তা কিনতে ব্যস্ত সব বয়সী ক্রেতারা। কেউ জুতা কেউবা প্যান্ট, গেঞ্জি, মালা, ঘড়ি, পার্সসহ নানা জিনিস কিনছেন। ব্যবসায়ীরাও দীর্ঘদিন পর বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

২৭ বছর ধরে গুলিস্তানের ফুটপাতে জুতার ব্যবসা করেন আব্দুল কাদের। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে যেখানে তিনি দিনে ২০-২৫ হাজার টাকা বেচাকেনা করতেন সেখানে লকডাউনের পর বিক্রি হয় ১০-১২ হাজার টাকা। করোনার কারণে মানুষের হাতে টাকা নেই। লকডাউনে অনেকে ধার করে চলেছেন। ফলে দোকানপাট খুলে দেওয়ার শুরুতে বেচাকেনা কম হলেও গত কয়েক দিনে তা বেশ বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আরো বাড়বে বলে জানান কাদের।

গুলিস্তানে ফুটপাতে বেল্ট বিক্রি করেন মো. সোহেল। লকডাউনে তার কিছু টাকা ধার করতে হয়েছে। দোকান নিয়ে বসতে পারায় দেনা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন তিনি। প্রথম কয়েকদিন বেচাকেনা কম ছিল। এখন প্রতিদিনই বাড়ছে ক্রেতার সংখ্যা। করোনার আগে ৮-১০ হাজার টাকা বেচাকেনা হতো। এখন প্রতিদিনই ক্রেতা বাড়ায় ৬-৭ হাজার টাকা বিক্রিতেই খুশি এই বেল্ট বিক্রেতা। লকডাউনে কাজকর্ম ছিল না মাল্টা ও নাসপাতি বিক্রেতা মো. সবুজের। দোকান নিয়ে বসায় এখন প্রতিদিনই তার বিক্রি হয় ১০-১২ হাজার টাকা। এতে স্বস্তি ফিরেছে তার পরিবারে।

গুলিস্তানের এসব ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি শোরুমগুলোরও একই অবস্থা। একটি শোরুমের তত্ত্বাবধায়ক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আগের তুলনায় বেচাকেনা এখন অর্ধেক হচ্ছে। খরচ ওঠে কিন্তু আয় হচ্ছে না। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে চার-পাঁচ মাস সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের আরেক দোকানি জাহিদ বলেন, প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। পরিস্থিতি ভালো হলে বিক্রি আরও বাড়বে। দেনা দিতে পারছি। লোকসান কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।

বেচাকেনা বাড়লেও নানামুখী চাপে পড়েছে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। লকডাউন তুলে দেওয়ায় ব্যবসা শুরু হলেও সমস্যাও বেড়েছে। বাসাভাড়া, সন্তানদের পড়ার খরচ, পাওনাদারের টাকা পরিশোধসহ নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। এসব সমাধানে যে টাকার প্রয়োজন তার অর্ধেকও বেচাকেনা হচ্ছে না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।

ফুটপাতের ব্যবসায়ী মো. মিজান বলেন, করোনায় মানুষের সহযোগিতা পেতাম, এখন পাই না। বাসাভাড়া, পড়ার খরচ, পাওনাদারদের টাকা দেওয়া সব চাপ একসঙ্গে। পাঁচজন ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করে। করোনাকালের চেয়ে এখন সংসার চালানো বেশি কঠিন।

সাত-আট বছর ধরে ফুটপাতে ব্যবসা করেন প্যান্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাজু। তিনি বলেন, বেচাকেনা ভালোই শুরু হয়েছে। স্বাভাবিক হলে পাঁচ মাস পর আগের মতো হয়ে যাবে। কিন্তু আবার লকডাউন বা ফুটপাত থেকে তুলে দিলে গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

একই অবস্থা ছেঁড়া ও নতুন টাকার ব্যবসা করা মো. আমিরুল ইসলাম ভূঁইয়ার। তিনি জানান, ছয়জনের সংসার নিয়ে তাঁতিবাজারে বাস করি। সকাল থেকেই কাস্টমার কম। আবার কাস্টমার আসলেও বিক্রি হচ্ছে না। আগের চার ভাগের এক ভাগ বেচাকেনা হচ্ছে। কবে স্বাভাবিক হবে তাও জানেন না তিনি।

গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল সড়ক মার্কেটের মোবাইল মেকানিক শাহজাহান বলেন, নানা চাপে আছি। দু-তিন হাজার টাকা মাত্র আয় হচ্ছে সারাদিনে। চাহিদা অনুযায়ী চলতে হচ্ছে।

এই মার্কেটেরই ফুচকা বিক্রেতা খলিল। লকডাউনে ধারদেনা করে চলেছেন। অনেকে এখন চাপ দিচ্ছেন। কম করে হলেও টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। দুই সন্তানের পড়ালেখার খরচসহ পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে এক বছর লাগবে সব কাটিয়ে উঠতে। এরই মধ্যে যদি লকডাউন আসে বা বসতে না দেয় তবে কী করবেন তা তিনি জানেন না।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল সড়ক মার্কেট সমিতির সভাপতি সোহরাব হোসেন নান্নু বলেন, দোকান তুলে দেওয়া বা বসানো এটি সিটি করপোরেশনের বিষয়। আমরা মার্কেটে যদি কেউ এমন পরিস্থিতিতে পড়ে যে, দোকান ভাড়া দিতে পারছে না তবে মালিক ও দোকানদারকে নিয়ে সমাধানে আসার চেষ্টা করি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই