ঢাকা : তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ দাবি করেছেন, রামপুরায় গাড়িগুলোতে ছাত্ররা আগুন দেয়নি। ওই মহল ছাত্রদের গায়ে কালেমা লেপন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ঘটনা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একটি মহল দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
বুধবার (১ ডিসেম্বর) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এ দাবি করেন।
তিনি বলেন, হাফ ভাড়া এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে বিআরটিসি বাসে হাফ ভাড়া আজ থেকে কার্যকরের নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে ঢাকার বাস মালিক সমিতি ঢাকায় হাফ ভাড়া কার্যকর করেছে।
মন্ত্রী বলেন, গত পরশুদিন রাতে একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। সেটি হচ্ছে রামপুরায় অনাবিল পরিবহনের বাসের চাপায় একজন ছাত্র নিহত হয়েছে। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। কিন্তু এ ঘটনা একটু বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, এই ঘটনা থেকে কিছু প্রশ্ন উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্যানুযায়ী ঘটনাটি ঘটে রাত পৌনে ১১টায়। এর ১২ মিনিট পর 'নিরাপদ সড়ক চাই' তাদের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ করা হয়। রাত ১১টায় জামায়াত পরিচালিত টেলিগ্রাম চ্যানেলে খবরটি প্রকাশিত হয়। আর সেখান থেকে সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ১২ মিনিটেই 'নিরাপদ সড়ক চাই' পেজের অ্যাডমিন সেখানে কীভাবে পৌঁছালে, সেখান থেকে লাইভ কীভাবে করল? বাঁশের কেল্লা কীভাবে ১৫ মিনিটের মধ্যে এই খবর পেল এবং সেখান থেকে খবর প্রচার করল?
ঘটনার ১৫ মিনিটের মধ্যেই ১০/১২টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, গাড়িগুলোতে আগুন ছাত্ররা দেয়নি। কারণ ঘটনার ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে এত ছাত্র সেখানে পৌঁছায়নি। প্রশ্ন হচ্ছে যারা ফেসবুক পেইজে লাইভ দিয়েছে তারা কি ঘটনা সম্পর্কে আগে থেকেই অবহিত ছিল কিনা? ১২ মিনিটের মধ্যে যারা লাইভে গেছে এবং ১৫ মিনিটের মধ্যে লোকজন জড়ো করে বাসে যে আগুন দেওয়া হলো, তারা আগে থেকে প্রস্তুত নিশ্চয়ই ছিল। এত অল্প সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনী/পুলিশ সেখানে পৌঁছাতে পারে না, অথচ তারা পৌঁছে গেল, এই প্রশ্নগুলো উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনে ভর করে একটি মহল দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। গত পরশু দিন রাতের ঘটনা থেকে সেটি স্পষ্ট। ছাত্রদের গায়ে কালেমা লেপন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ছাত্ররা অনেক দিন ধরে আন্দোলন করছে, তারা কিন্তু কোনো জায়গায় গাড়িতে আগুন দেয়নি, এমনকি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেনি। ছোটখাট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু বড় ভাঙচুরের ঘটনা সেভাবে ঘটেনি। অথচ সেদিন ঘটনার ১৫ মিনেটের মধ্যে ১২ থেকে ১৫টি বাসে আগুন দেওয়া হলো।
মন্ত্রী বলেন, এগুলো দুষ্কৃতিকারীরা করেছে, যারা দেশে কোনোকিছুর ওপর ভর করে অতীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। আজকেও এই ছাত্রদের ওপর ভর করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টার উদ্দেশ্যে এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
জড়িতদের তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এ ঘটনা নিয়ে অবশ্যই তদন্ত হচ্ছে এবং হবে। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করে নিশ্চয়ই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে মামলাও হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু মামলা হয়েছে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। সরকার ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল বলেও জানান ড. হাছান।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিআরটিসি বাসে ছাত্রদের হাফ ভাড়া যেভাবে সারা দেশে কার্যকর করা হয়েছে, আমি ব্যক্তিগতভাবেও আশা করব চট্টগ্রামসহ অন্যান্য শহরের ক্ষেত্রেও বেসরকারি বাস মালিকরা একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ