ঢাকা : লাগামহীন নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে হাহাকার নেমে এসেছে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের। জীবনযাত্রার সকল ব্যয় বাড়লে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। মাসের অর্ধেক পার না হতে অন্যের কাছ থেকে ধার দেনা করে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের। উপরের গ্রেড গুলোতে পদ না থাকলেও নিয়মিত পদোন্নতি হলেও যোগ্যতা থাকার পরও নিচের গ্রেডের কর্মচারীরা পদোন্নতি পাননা। সারাজীবন একই পদে চাকরি অথবা নামমাত্র পদোন্নতি নিয়ে অবসরে যেতে হচ্ছে তাদের।ফলে চাকরি জীবনে বঞ্চিত হওয়ায় বেতন স্কেল না বাড়ায় তারা পেনশনও পাচ্ছেন অনেক কম।
আরও পড়ুন : ৩৫০ জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ ও বরখাস্ত
সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে সবচেয়ে কম বেতনে চাকরি করেন ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীগণ। বর্তমান বাজারে মাসিক বেতনের টাকা দিয়ে তাদের টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মাস শেষে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীগণ যে বেতন পান তা দিয়ে বাসা ভাড়া, পরিবারের ৬ জন সদস্যের মাসের বাজার সদাই, ছেলে মেয়েদের পড়াশুনায় ব্যয় করে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না।
আরও পড়ুন : রহস্যঘেরা, চমকে মোড়া একজন ধনকুবের
পরিবার না পারে তাদের চিকিৎসা করতে, না পারে সামাজিকতা রক্ষা করে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যেতে, শপিং করা তো অনেক দূরের কথা। কোন মাসে পরিবারের কেউ অসুস্থ্য হলে ধার দেনা করে পরের মাসে বাজার টান পড়ে যায়। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ, চিকিৎসা, সংসার খরচ ও সামাজিক ব্যয় মেটাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। কেউ কেউ তো মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষম হয়ে পড়ছে। কোন কোন কর্মচারী সারা জীবন ভাড়া বাসায় থাকার পর চাকুরী শেষে একটি মাথাগুজার ঠাইও ব্যবস্থা করতে পারে না।
আরও পড়ুন : কর্মকর্তা-জনপ্রতিনিধি দ্বন্দ্বে ডুবছে উপজেলা পরিষদ
আজকের বাজারে ১৫-২০ বাজার টাকায় বাঁচারমত বাঁচা যায় না, মরার মত বেঁচে থাকতে হচ্ছে তাদের। ১১-২০ তম গ্রেডের সরকারি চাকুরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায়ের ফরম দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে থাকলেও কোন সুরাহাই হচ্ছে না। তাদের দাবি দাওয়া বাস্তবায়নে কোন প্রকার অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। সরকারের কাছে বার বার দাবীসমূহ তুলে ধরা হলেও কোন প্রকার সাড়া মিলছে না। এমতাবস্থায় দিশেহারা কর্মচারীগণ কোন কুল কিনা খুজে পাচ্ছে না। জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ বা হস্তক্ষেপ না করলে অসহায় এসব কর্মচারীদের ভাগ্য সহায় হবে না।
রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি খুচরা দোকান কাঁচা সবজিতে ভরপুর। কোনো সবজি বা পণ্যের ঘাটতি নেই। বিক্রেতারা বলছেন, স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। ফলে বাজার এখন ভরপুর। দামও তুলনামূলক কমেছে। এ ব্যাপারে বিক্রেতাদের ব্যাখ্যা, দাম কমেছে গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায়।
শীতের মৌসুম হিসেবে প্রতিবছর যে দাম থাকে এ বছর তার চেয়ে অনেক বেশি দরেই কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। গতকাল ঢাকার বেশ কিছু সবজি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সারা বছর বেশি দামে যে পণ্যটি ভোক্তাদের কিনতে হয় সেটি হলো টমেটো। সময় বিশেষে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। কিন্তু শীতের পুরো মৌসুমে দর ১৫ থেকে ২০ টাকায় নেমে আসে। এ বছর সেই টমেটো বিক্রি হচ্ছে এখন ৪০-৬০ টাকায়। আগের সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা কমে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। আলুর দর তুলনামূলক এই সময় এমনই থাকে। তবে এই সময় শিম বিক্রি হয় সাধারণত ১০ থেকে ১৫ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজিতে। বর্তমান বাজার দর হিসেবে গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকায়। বরবটির কেজি ৫০-৭০ টাকায়। ফুলকপির পিস ৩০-৪০ টাকা এবং বাঁধাকপির পিস ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সস্তা সবজি হিসেবে যে পণ্যটি ক্রেতাদের কাছে সহজলভ্য হিসেবে থাকে, সেটি হচ্ছে মুলা। গ্রামের বাজারে মুলার দাম না পেয়ে কৃষকরা ফেলে দিয়ে চলে যান। ঢাকায় সেই মুলার কেজি এখনো ৪০-৫০ টাকা। শালগমের (ওলকপি) কেজি ৩০-৪০ টাকা। অবশ্য আগের সপ্তাহের তুলনায় সবগুলো সবজির দর কিছুটা কমেছে। তবে বছরের সময় হিসাব করলে প্রতিটি সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা ক্ষেত্র বিশেষে তার চেয়ে বেশি দরে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। প্রোটিনের সহজ উৎস ব্রয়লার মুরগি বছরজুড়েই ক্রেতাদের ভুগিয়েছে। এখনো ভোগাচ্ছে এই পণ্যটি। সাদা মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকা কেজি দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬০-১৬৫ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০-১৫৫ টাকা। মানে দুই সপ্তাহে বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৫ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫০-২৭০ টাকা। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, পণ্যের বাজার কোনো নিয়ম মেনে চলছে- এটা মনে হয় না। সম্ভবত কিছু মানুষ একসঙ্গে কল্পনা করছে- এখনি সময় মুনাফা করার। বাজারে সরবরাহ বাড়ছে কিন্তু বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দর কমলেও দেশের বাজারে দর বেশি। মানুষেরও যেন গা সওয়া হয়ে গেছে। উত্তরণের উপায় কী- তা নিয়ে কারও ভাবনা নেই। কর্তৃপক্ষ উন্নয়নের জিডিপিতে খুশি। কিন্তু এর পরিবর্তন হওয়া দরকার। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।
বাংলাদেশ সরকারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের মুখ্য সমন্বয়ক মো. ওয়ারেছ আলী বলেন, আমাদের দাবি এ বছর ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ থেকে ৮টি বিভাগে ধারাবাহিকভাবে মহাসমাবেশ করা হবে।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ