ঢাকা : মিনিকেট নামে কোনো ধান বা চাল নেই উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, অন্যান্য জাতের ধানকে এসব ধানের চাল বলে বিক্রি করা হচ্ছে।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
চাল কেটে বা ছেঁটে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল নামে বিক্রি করছে যারা; তাদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘অরিজিনালি মিনিকেট নামে কোনো ধান নেই। সরু মিনিকেটের ক্ষেত্রে জিরাশাইল, শম্পাকাটারি এই দুই রকমের ধানই বেশি। এমনকি নাজিরশাইল নামে কোনো ধান নেই।
সাংবাদিদদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা লিখুন- এই সাদা চকচকে চালে কোনো পুষ্টি নেই। লাল চাল খান।
‘চাল কেটে ছোট করা হয় এটা ঠিক নয়। আপনাকে মিলে যেতে হবে, পর্যবেক্ষণ করতে হবে। চালকে কাটতে কাটতে কিন্তু ছোট করে না। ছোট করলে তার ওয়েট লস হবে, ওয়েট লস হলে তার পোষাবে না। তারা পলিশ করে, পলিশে ওজন কমে না। মোটা চাল কেটে মিনিকেট বানায় এটা কিন্তু ঠিক নয়। আমাদের সবার একটা ভুল ধারণা যে চাল কেটে ছোট করে। ঘটনা কিন্তু তা নয়।’
বস্তায় লিখতে হবে ধানের জাত : এর আগে খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে একটা রিসার্চ ওয়ার্ক করেছি। এটা সত্যি বাজারে মিনিকেট নামে চাল বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু মিনিকেট নামে ধান নেই বললেই চলে। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, এক সময় মিনিকেটে করে বিদেশ থেকে ধান আসছিল, তখন সেই কিটের নাম অনুসারে গ্রামের মানুষ নাম দিয়েছে মিনিকেট। এখন ব্রি-২৮ ও ২৯ ধান ও মোটা ধানকে মিনিকেট বলছে।
তিনি বলেন, আমরা একটা ছাঁটাই নীতিমালা করছি। ওই রিসার্চের ফলাফলও বিভিন্ন পর্যায়ে পাঠিয়েছি। ধান যেটাই হোক নাম দিচ্ছে মিনিকেট, এটা তাদের ব্র্যান্ড নেম। আমরা এখন চেষ্টা করবো, ব্র্যান্ডিংটা আপনি যে নামেই করুন, মূল ধানের সোর্স (জাত) সেটা লিখতে হবে। সেই কাজটি আমরা করছি।
সচিব বলেন, ধানের ৮ শতাংশ পর্যন্ত আপনি ছাঁটাই করতে পারবেন। কিন্তু অনেক জায়গায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাঁটাই করা হচ্ছে, এটা কৃষি মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য। আমরা সেজন্য ছাঁটাই নীতিমালা করছি। একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, তারা কাজ করছে। তারা ঠিক করবে বিজ্ঞানসম্মতভাবে কত শতাংশ ছাঁটাই করা যাবে। সেটা করার জন্য আমাদের কার্যক্রম চলছে। আমরা চাচ্ছি ধানের জাতের নাম যাতে বস্তায় লিখে দেয়। মিনিকেট ব্র্যান্ড তারা ব্যবহার করে করুক।
শাকসবজির দাম বেশি, চালের দাম বাড়ছে- এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, মূল্যবৃদ্ধির কারণ কী? উৎপাদিত ফসল যখন বাজারে আনা হয়, সবজির কথাই বলছি, সবজির মোকামে আপনি যান সবজি আপনি যে দামে কিনবেন, ঢাকায় আসতে যদি দাম চারগুণ বেশি হয়, আমাদের কিন্তু কোনো সিস্টেম কিংবা মনিটরিংও নেই, আমাদের কোনো নীতিমালা বা রেটও নেই। লালশাক, কপি এই দামে বিক্রি করতে হবে, এমন কিছু নেই।
তিনি বলেন, কৃষক উৎপাদিত ফসলের দাম না পেলে পুষ্টি তো দূরে থাক আপনি তো খুঁজেই পাবেন না। কৃষকরা যে এখনো তৈরি করে আমাদের খাওয়াচ্ছে...আমাদের কৃষকদের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সাধন চন্দ্র বলেন, ফাল্গুন-চৈত্র মাসের দিকে চালের দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য আমরা সচেষ্ট থাকি যার জন্য আমরা গত বছর বেসরকারিভাবে কিছুটা আমদানিও করেছিলাম। সেই প্রস্তুতিও আমাদের আছে।
তেলের দাম বাড়ার কারণে চাল পরিবহন খরচ বেড়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারপরও আমাদের মনিটরিং অত্যধিক জোরদার করা আছে।
খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বেসরকারিভাবে চাল আমদানি করা হয় কারণ ব্যবসায়ীরা আমাদের বেকায়দায় ফেলার মতো কোনো পরিস্থিতি যাতে তৈরি করতে না পারে। আমরা ১৭ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিলাম, কিন্তু চাল এসেছে ২ লাখ ৯৪ হাজার টনের মতো। এদিকে আমরা সরু পোলাও চাল আবার রপ্তানিও করি। আমরা কিন্তু সত্যি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দুর্যোগ ও নিরাপত্তার কারণে আমরা কিছু আনি, এটা দোষের কিছু নয়।
এ বিষয়ে খাদ্য সচিব বলেন, ব্যবসায়ীরা চাল আনেনি, কারণ তারা আনলে লাভ করতে পারবে না। এর মানে চাল দেশেই আছে। যে চাল আনি সেটা এক্সট্রা, খাদ্যনিরাপত্তার জন্য আনা হয়। কিন্তু আমরা এটা এমনভাবে করি যাতে কৃষকের ক্ষতি না হয়।
সোনালীনিউজ/এমটিআই