ঢাকা : দেশে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে দিনদিন বাড়ছে শঙ্কাও।
রোববার (১৬ জানুয়ারি) আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ২২২ জনের শরীরে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশে। এই হার গত বছরের ১৭ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। এদিন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮ জন। আর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৯ হাজার ৩০৫ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৭১১ জনের দেহে। এর আগে গত বছরের ২৪ আগস্টের পর এটাই সর্বোচ্চ শনাক্ত। সেদিন শনাক্ত হয় ৫ হাজার ২৪৯ রোগী। এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ১৪৪ জনের। আগের দিন শনিবার (শুক্রবারের হিসাব) ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩ হাজার ৪৪৭ জন নতুন রোগী পাওয়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক দিনেই রোগী বেড়েছে প্রায় দুই হাজার। সেদিন ১৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এক দিনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের সবচেয়ে বেশি। এই বিভাগে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে তিনজন ও সিলেটে একজনের মৃত্যু হয় ভাইরাসটিতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, মাত্র এক সপ্তাহে ২২২ শতাংশ শনাক্ত বেড়েছে। তিনি বলেন, দেশে গত বছরের নভেম্বরের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত সংক্রমণ কিছুটা স্থিতিশীল ছিল। ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ক্রমাগত বাড়তে শুরু করে। জানুয়ারিতে এসে আগের বছরের চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে।
নাজমুল ইসলাম বলেন, অনেকেই ধারণা করছেন করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের কারণে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। কিন্তু এটি বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ দিয়ে নিশ্চিত তথ্য নয়। ধরে নিতে হবে দেশে এখনো ডেল্টা প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। নতুন করে ঘটছে ওমিক্রনের সংক্রমণ। সারা বিশ্বে যেমন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে সরিয়ে ওমিক্রন জায়গা দখল করেছে, ধীরে ধীরে হয়তো বাংলাদেশেও এমনটি হবে।
তিনি আরো বলেন, এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই। আমাদের টিকা গ্রহণের হারও বাড়াতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশে যত সংখ্যক মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তত সংখ্যক টিকা নিচ্ছেন না। আগ্রহের জায়গা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে একজন আরেকজনকে সহযোগিতা করতে হবে।
অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ওমিক্রনে ক্ষয়-ক্ষতি কম হয়, ফুসফুস কম আক্রান্ত হয়, এসব ভেবে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। ডেল্টা সংক্রমণের সময় আমরা যতটা সচেতন ছিলাম, যতটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছি, এখনো সেভাবেই চলতে হবে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে স্কুলের কোমলমতি শিশুদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যেই এই টিকা কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসাতেও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এই শিক্ষার্থীদের আমরা টিকা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই, তাদের টিকা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা কওমি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের কাজটি যেন শেষ হয়, আমরা শতভাগ টিকা দিয়ে দিতে পারব।
নাজমুল ইসলাম বলেন, পাশাপাশি যেসব পরিবহন শ্রমিক আছেন যারা আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করার জন্য কাজ করছে তাদেরও আমরা টিকা দিতে চাই। কাজেই এই সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা যদি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের কাছে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তাদের টিকা দেওয়ার কাজটি আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ গতকাল গণমাধ্যমেক জানান, বুস্টার নিয়েও অনেকে ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছেন। যদিও করোনার বুস্টার ডোজ নিলে দেহে যথেষ্ট পরিমাণ অ্যান্টিবডি হয়। তবে বুস্টার ডোজ নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। টিকা নেওয়ার পর কেউ ওমিক্রনে আক্রান্ত হবে না, এমনটি বলা যাবে না।
শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার কম, এখনো সেটি বলার সুযোগ নেই। ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে উল্টো শারীরিক নানা জটিলতা দেখা যেতে পারে। কাপড়ের মাস্ক পরা ভালো, সার্জিক্যাল মাস্ক আট ঘণ্টা পর ফেলে দিতে হবে।
উপাচার্য আরো বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ২৪ শতাংশ। অনেকেই উপসর্গ ছাড়াও দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য নমুনা পরীক্ষা করছেন। আক্রান্তের হার কমাতে না পারলে দেশে বিপর্যয় আসতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, কোভিড হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগেও বিএসএমএমইউ ফিল্ড হাসপাতালে মাত্র সাতজন রোগী ছিলেন। এখন সেখানে ৪৭ জনসহ মোট ৫৬ রোগী ভর্তি আছেন।
সোনালীনিউজ/এমটিআই