কিছু ভুল হয়েছে, তবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২, ০১:০৪ পিএম

ঢাকা : বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, আজ আমাদের শেষ কার্যদিবস। দীর্ঘ পাঁচ বছর আমরা নির্বাচন কমিশনে ব্যস্ততম সময় পার করেছি। অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি এবং তা সফলভাবে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশের সংবিধান প্রদত্ত দায়িত্বসহ যাবতীয় দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছি।

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) গত পাঁচ বছরের সফলতা তুলে ধরতে ইসি সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আপনারা জানেন বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চ্যালেঞ্জসমূহ কি তা জানার চেষ্টা করে। নির্বাচন কমিশন সে অনুযায়ী কর্মপন্থা নির্ধারণ করে।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে একটি কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। এ কর্মপরিকল্পনা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর স্টেকহোল্ডার-নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট নাগরিক, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক ও সিনিয়র জার্নালিস্ট, এনজিও প্রতিনিধি নির্বাচন পর্যবেক্ষক, বিদেশি কূটনীতিক ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। তাদের সুনির্দিষ্ট মতামত, প্রস্তাব ও পরামর্শ আমাদের সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সব নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করেছে এবং আমাদের সার্বিক কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করেছে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন পাঁচ বছরে ৬৬৯০টি নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছে।  রুটিন কাজের বাইরেও আমরা নতুন কিছু কাজ শুরু করেছি।

তিনি বলেন, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব আইন যুগোপযোগী করে সংস্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ জনগণ যাতে সহজেই আইনসমূহ বুঝতে পারেন, সে জন্য আইনসমূহ বাংলায় রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিভিন্ন আইন সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) অনুবাদ করে নির্ভরযোগ্য বাংলা পঠন প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণ আইন প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ বাংলায় নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা নিয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন পাঁচ বছরে দুবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের মাঠপর্যায়ে অফিসসমূহের মাধ্যমে সারাবছরই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। বর্তমানে (১৯ জানুয়ারি ২০২২) দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৩১ লাখ ২৩ হাজার ১৭৫ জন।

তিনি বলেন, বর্তমান কমিশন হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। প্রথমবারেই ৩৬০ তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিক ভোটার হন।

প্রবাসী ভোটার তালিকাভুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, আপনারা জানেন প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। জাতীয় পরিচয়প্রাপ্তি প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি। তাদের এ দাবি পূরণে নির্বাচন কমিশন বিদেশে বসবাসরত প্রত্যেক নাগরিককে ভোটার তালিকাভুক্ত করা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। বেশ কয়েকটি দেশে কার্যক্রম শুরু করা হলেও বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে তা এগিয়ে নেওয়া যায়নি। আশা করি পরবর্তী কমিশন এ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

পিতামাতার পরিচয়হীনদের ভোটার তালিকাভুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, যারা তাদের পিতামাতার পরিচয় জানে না বা জানাতে চান না, তাদের কীভাবে ভোটার করা যায় তা দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে যারা এতিমখানায় বড় হয়েছে বা তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী তাদের পিতামাতার নাম জানা থাকে না বা অনেকে জানাতে চায় না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে একটি ওয়ার্কশপও করা হয়েছে।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বিষয়ে তিনি বলেন, তিনটি রাজনৈতিক দলকে নতুন করে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের বিধিবিধান যথাযথ প্রতিপালন না করায় তিনটি দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও দক্ষতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনায় সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পাঁচ বছরে ২৪ লাখ ৭০ হাজার ৮৮১ জন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে জিআইএস পদ্ধতি ব্যবহার করে জাতীয় সংসদের ২৫টি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো সিটমহলগুলোকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেন। পাঁচ বছর মেয়াদ আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই