নির্বাচনের কর্মকৌশল নির্ধারণ

প্রথম সংলাপেই হোঁচট

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২২, ০১:৩২ পিএম

ঢাকা : আগামী নির্বাচনের কর্মকৌশল নির্ধারণে রোববার (১৩ মার্চ) প্রথমবারের মতো সংলাপে বসেছে নির্বাচন কমিশনাররা। আর প্রথমেই ডাকা হয়েছিল শিক্ষাবিদদের। তবে তাদের প্রথম উদ্যোগ খুব বেশি সফল হয়নি। কমিশন ৩০ শিক্ষাবিদকে আমন্ত্রণ জানালেও সংলাপে যাননি ১৭ জন। অবশেষে মাত্র ১৩ শিক্ষাবিদকে নিয়ে বৈঠক সারলেন কমিশন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ নিয়ে এই সংলাপে অংশ নেওয়া শিক্ষাবিদরা হলেন ড.  মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার, আবদুল মান্নান চৌধুরী, ওয়ার্ল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মফিজুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, আখতার হোসেন, আল মাসুদ হাসানুজ্জামান, জাফর ইকবাল, বোরহান উদ্দিন খান এবং লায়লাফুর ইয়াসমিন।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সংলাপের শুরুতে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে মতবিনিময়ে সূচনা বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল মন্তব্য করেন, অতীতে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচন যাতে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক হয় সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

নতুন সিইসি বলন, আমরা চাই নির্বাচন যেন আরো অধিক অংশগ্রহণমূলক হয়। জনগণের প্রকৃত মতামত রিফলেক্টস থ্রো ব্যালটস হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের কি করণীয় হতে পারে আপনাদের কাছে সেই পরামর্শ চাই। আমার বিশ্বাস, আপনাদের মতামত থেকে জ্ঞান আহরণ করতে পারব।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ধারাবাহিক এমন বৈঠক থেকেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরির পরিকল্পনা করা হবে।

এরপর বিশিষ্ট নাগরিক, গণমাধ্যম প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এই সংলাপে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন যতই ভালো কাজ করুক না কেন, তাদেরকে গালি খেতেই হবে। তাই এই বিষয়টি নিয়ে না ভেবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কারণ সাবেক সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে এখন পর্যন্ত কোনো ভোট পরীক্ষা দিতে হয়নি।

জাফর ইকবাল নির্বাচন কমিশনকে বলেন, আপনারা যত ভালো কাজই করেন না কেন, গালি আপনাকে খেতেই হবে। গালি নিয়ে ভাববেন না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে যেন বলতে পারেন, আমি কাজটা ঠিকমতো করতে পেরেছি। এটা গুরুত্বপূর্ণ।’

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নিয়েও কথা বলেন জাফর ইকবাল। বলেন, ইভিএম সম্পর্কে বলা হচ্ছে এটা নাকি অনেক হাই লেভেলের টেকনোলজি। আসলে তা না। এটা খুবই লো লেভেলের টেক। এখন তো অনেক হাইটেক জিনিসপত্র আছে। আমাদের ভার্সিটির স্টুডেন্টরা ইভিএম নিয়ে প্রজেক্ট করে।

নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ হিসেবে দেখতে চান না বলেও জানান এই শিক্ষাবিদ। বলেন, আমি নিরপেক্ষতাকে ভয় পাই। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন এমন নির্বাচন হবে যেখানে জয়ী দল এবং হারা দল- দুটোই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক হবে।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে ভাবারও পরামর্শ দেন জাফর ইকবাল। বলেন, ‘দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বিদেশে থাকে। তারাও দেশ নিয়ে ভাবে। তারা কীভাবে ভোট দিতে পারে সেটা দেখতে হবে।’

জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে জটিলতার সমাধানের পরামর্শও দেন এই শিক্ষাবিদ। বলেন, ‘ইদানীং দেখা যাচ্ছে অনেক জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল হচ্ছে। এটার জন্য অনেকে অনেক টাকা খরচ করেও সমাধান পাচ্ছে না। কমিশন এটা দেখলে ও সমস্যার সমাধান করলে একটা পজিটিভ ইমপ্রেশন পড়বে।’

পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এই সংলাপ হবে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও সংলাপ হবে সবার পরে। এরপর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে ইসি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই