ঢাকা : খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ৩ যাত্রী গত ৪ মে দিবাগত রাতে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করতে চান। কিন্তু টিটিই মো. শফিকুল ইসলাম তাদের জরিমানা করেন।
এরপর বৃহস্পতিবার (৫ মে) বিকেলে ঈশ্বরদীর পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনের নির্দেশে টিটিই মো. শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এতে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। তীব্র সমালোচনার মুখে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করতে চাওয়া ওই ৩ যাত্রী নিজের আত্মীয় নন বলে সাফ জানিয়ে দেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
অবশেষে সত্যটা জানা গেছে। চাকরিও ফিরে পেয়েছেন বরখাস্ত হওয়া টিটিই মো. শফিকুল ইসলাম। সেদিন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে কী ঘটেছিল তার আসল ঘটনা জানিয়েছেন শফিকুল।
রেববার (৮ মে) ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার জন্য বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়েছিলেন শফিকুল। পাকশীর বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার (ডিসিও) কার্যালয়ে তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসাবাদের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সেদিন আমি খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে দায়িত্ব পালন করছিলাম। ট্রেনটি ১ নম্বর প্লাটফর্মে আসার পর আমাকে জানানো হয় এসিও (সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম) স্যারের অনুরোধে ৩ জন যাত্রী উঠেছেন, তারা এসি কেবিন যেটা ফাঁকা আছে সেখানে উঠেছেন। আমি তখন এসিও স্যারকে ফোন দিলে তিনি বলেন, রেলমন্ত্রীর আত্মীয় আছেন তিনজন, ওরা এসি রুমের কেবিনে যাবে।
আমি তখন বলেছি, স্যার তাদের তো কোনো টিকিট নাই, তাহলে কী করব? তখন স্যার বলেন, তাদেরকে সাধারণ মানের যে টিকিট আছে ওটার ব্যবস্থা করে দিতে। এরপর ওই তিন যাত্রীর সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। ট্রেন চালু হওয়ার পর আমি যাত্রীদের টিকেট পরীক্ষা শুরু করি।
টিকেট পরীক্ষা শুরুর সময় ট্রেনের অপারেটরকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কেবিনে তারা (মন্ত্রীর আত্মীয়) আছেন? আমাকে দেখানোর পর আমি সেখানে গিয়ে তাদেরকে সম্মানের সঙ্গে বললাম, আপনাদের তো কোনো টিকিট নেই। আমাকে এসিও স্যার যেহেতু বলেছেন, তাই আপনাদের নরমাল যে ভাড়া সেটা দিন, আমি টিকিটের ব্যবস্থা করে দেই। তখন তারা আমাকে জনপ্রতি ৩৫০ টাকা হারে ১০৫০ টাকা ভাড়া দেন। আমি তাদের ভাড়া আদায়ের রসিদ দিয়ে চলে যাই। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে আমার আর কোনো কথাবার্তা হয়নি।এরপর কী কারণে আমাকে বহিষ্কার করা হলো তা আমি বুঝতে পারিনি।
মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় পাওয়ার পরও তাদের জরিমানা করেছেন কি না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হ্যাঁ বাড়তি ভাড়ার টিকেট ছাড়া আমি যেহেতু টিকিট ইস্যু করতে পারি না। তাই তাদেরকে জরিমানাসহ টিকেট দিয়েছি। ঈশ্বরদী থেকে ঢাকার কাউন্টার ভাড়া ২৯৫ টাকা, জরিমানাসহ জনপ্রতি ৩৫০ টাকা করে ১ হাজার ৫০ টাকা নিয়েছি। আমি ওপর ওয়ালাকে (আল্লাহ) সাক্ষী রেখে বলছি, তাদের সঙ্গে আমার কোনো বাগবিতণ্ডা হয়নি। এরপর তারা কী কারণে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেন আমি সেটা জানি না।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ