ঢাকা : সাধারণ মানুষের মধ্যে জাতীয় বাজেট নিয়ে তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। তাদের ধারণা, কোনো ঘোষণাই নিত্যপণ্য বা খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে পারে না। ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই পণ্যের দাম বাড়াবেন সেটাই স্বাভাবিক। তাই নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য এ বাজেট কোনো কাজে আসবে না।
যেমন আছে, তেমনিই চলবে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য উচ্চবিত্তরা কিছুই ভাবছে না। তাই সরকারের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই বড় চ্যালেঞ্জ।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রাজধানীর পুরানা পল্টনের জামান টাওয়ারের নিচতলার একটি চায়ের দোকানে বসে কবির উদ্দিনের সাথে।
তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন, বলেনতো আপনাদের নিয়ে কেউ কী ভাবছেন। সকালে কী খেয়েছেন এবং দুপুরে ও রাতে কী খাবেন বলতে পারবেন কি? মনে রাখবেন আপনাদের নিয়ে কেউ ভাবছেন না। শুধু আপনারা না সারাদেশের লাখ লাখ নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের নিয়ে কেউ ভাবেন না।
তিনি আরও জানান, করোনা মহামারিতে গত দুই বছরে অনেক মানুষ বেকার হয়েছিল। এখন ধীরে ধীরে অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলে অনেকে কাজে ফিরেছেন। আবার অনেকে ফিরতে পারেননি। সেই সময় অনেকের বেতন কমেছিল। অনেকে সেই বেতনে ফিরে যেতে পারেননি। এতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের আয় রোজগার কমে গেছে।
অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আমদানি পণ্যের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের সব নিত্যপণ্যের বাজারে। একদিকে মানুষের আয় কমেছে, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এই আয়-ব্যয়ের সমীকরণ মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।
গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক এমএ রাজ্জাকও বাজেটে সাধারণ জনগণের জন্য কী থাকছে সেটিতে গুরুত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এ বছর খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গরিব মানুষ কীভাবে মূল্যস্ফীতির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটি সরকারকে দেখতে হবে।
যদি সহজে গরিব মানুষের কাছে খাবার পৌঁছানো যায়, তাহলে অন্তত খাদ্য নিরাপত্তাটা দেয়া যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাই সবচেয়ে বড় কাজ। এজন্য তিনি বাজেটে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর সুপারিশ করেন।
তিনি বলেন, সরকার সাধারণ মানুষকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৬২ লাখ পরিবারকে ৫ মাস ৩০ কেজি করে চাল দিচ্ছে। এর পেছনে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। এটাকে আগামী বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করছি। এটি হলে ২ কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া সম্ভব হবে। এটা কিন্ত মোট বাজেট বরাদ্দের এক শতাংশের নিচে এবং এবার এটাই সরকারের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
অবশ্য সরকারি সংস্থা বিবিএস বলছে, এই সময়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তবে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সরকারের এই হিসাবকে অযৌক্তিক মনে করেন।
তিনি বলেন, পণ্যমূল্য নিয়ে সরকারি সংস্থা বিবিএস যে তথ্য দিচ্ছে তা বাস্তবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এ ক্ষেত্রে যদি সঠিক তথ্য তুলে আনা না হয়, তবে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া টেকসই হবে না। বিবিএস পুরোনো ভিত্তি বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করছে, যা বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য না।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বাংলাদেশ স্বনির্ভরতা অর্জন করছে উল্লেখ করে বলেন, বৈষম্যই এখন রাষ্ট্র, সমাজের বড় চ্যালেঞ্জ।
মধ্যবিত্তের আয় না বাড়লে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে না। বাংলাদেশ অনেকটাই স্বনির্ভর হয়ে গেছে। বিদেশি সাহায্য না পেলে বাংলাদেশ পথে বসে যাবে, বাজেট চলবে না, পদ্মা সেতু বানাতে পারবে না, সেই পরিস্থিতি আর নেই। বাংলাদেশ এখন পারে।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সম্পর্কে এম এম আকাশ বলেন, টেকসই উন্নয়ন বলে একটি নতুন শব্দ এসেছে। টেকসই উন্নয়ন ধারণা আসার পরে বলা হচ্ছে গরিবের আয় ধনী লোকের চেয়ে বেশি হতে হবে। গরিবের আয় ১০ শতাংশ বাড়লে, বড়লোকের আয় বাড়বে ৬ শতাংশ। গড়ে আয় বাড়বে ৮ শতাংশ। এটি হলে গরিব আর বড়লোকের ব্যবধান কমতে থাকবে এবং মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। মধ্যবিত্তের সংখ্যা না বাড়লে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে না। গণতন্ত্র সেখানেই সফল হয়, যেখানে শক্তিশালী গণতন্ত্র আছে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই