ঢাকা: প্রমত্তা পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে পদ্মা সেতু। শনিবার (২৫ জুন) সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৬শে জুন থেকে পদ্মার বুক চিরে দুরন্ত গতিতে ছুটবে গাড়ি।
চার লেনের পদ্মা সেতুতে ৮০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে যানবাহন। এর মধ্য দিয়েই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের বহু বছরের দুর্ভোগের অবসান ঘটবে।
দেশীয় অর্থায়নে নির্মাণ হওয়া পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে লাগবে টোল। গত মাসেই ১৩ ধরনের যানবাহনের উপর টোল নির্ধারণ করেছে সরকার। সেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই টোল উঠাবেন সেতু কর্তৃপক্ষ। এর দায়িত্বে থাকছে কোরিয়া এক্সপ্রেস কর্পোরেশন ও চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি। তবে সেতু নির্মাণে ব্যয় হওয়া টাকা কত দিনে উঠবে এই জিজ্ঞাসা অনেকের। সেতু সংশ্লিষ্টরা ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন।
কেউ বলছেন ৩৬ বছর, কেউ কেউ বলছেন ৩০ বছরের মধ্যেই উঠে আসবে সেতুতে ব্যয় হওয়া টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেতুর কাজে ব্যয় হওয়া টাকা কত বছরে উঠবে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। সেতুতে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় করা হয়েছে তা ৩০ কিংবা ৩৫ বছরে উঠানো যাবে। এই সময় বাড়তেও পারে আবার আরও অনেক কম সময়েও উঠে আসতে পারে।
লক্ষ্য অনুযায়ী পদ্মা সেতুতে প্রথম অর্থবছর থেকেই তুলতে হবে প্রায় ১ হাজার ৭ শ’ কোটি টাকার মতো টোল। সেতু চালু হলে যানবাহনের সংখ্যা বাড়বে কয়েকগুণ। প্রতি বছরই এর সংখ্যা বাড়তে থাকবে। ফলে সেতুর খরচ উঠতে কত বছর লাগবে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত এক বছর। আগামী অর্থবছরের হিসাবের উপর নির্ভর করেই এটি জানা যাবে।
সেতু কর্তৃপক্ষ বলছেন, শুধু টোল আদায়েই উঠে আসবে পদ্মা সেতুর নির্মাণ খরচ। এজন্য লাগবে ৩৬ বছর। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে সেতু অর্থ বিভাগ থেকে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এ টাকা ৩৬ বছরে শোধ করতে হবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিমাসে ১৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা টোল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তারা। ১৪০ কিস্তিতে সেই টাকা শোধ করা হবে। এজন্য বছরে এক হাজার ৬শ’ ৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকার টোল আদায় করতে চাইছে সরকার। ইতিমধ্যে সরকার যানবাহনের ওপর টোল রেট নির্ধারণ করে দিয়েছে। দেশের বৃহত্তম সেতুতে টোল আদায়ে রাখা হয়েছি ২ ধরনের পদ্ধতি। এরমধ্যে একটা হলো সরাসরি টাকা দিয়ে টোল প্রদান করা যাবে। আবার পূর্বে রিচার্জের মাধ্যমে চালকরা সেই কার্ড প্রদর্শন করে সেতুর টোল দিতে পারবেন। এজন্য যানবাহনকে থামতে হবে না।
পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের মানুষের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে। সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। সেতুর টোল আদায় করবে কোরিয়া এক্সপ্রেস কর্পোরেশন ও চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি। ইতিমধ্যে তাদেরকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে সরকার। টোল আদায়ের পাশাপাশি সেতুর ঋণ শোধ, সেতুর ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণও করবে তারা। তিনি বলেন, সেতু নির্মাণে ব্যয় হওয়া টাকা ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যেই উঠে আসবে। তবে টোল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক থাকলে ২০ থেকে ২৫ বছরে পুরো টাকা তুলে আনা সম্ভব হবে।
গত ১২ই জুন পদ্মা সেতু এলাকায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২৫শে জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন টোল প্রদানের মাধ্যমে যানবাহন সেতু পার হতে পারবে। সেতুর নির্মাণ খরচ সরকারের কাছ থেকে লোন নিয়ে করা হয়েছে। ৩০ বছরে সেতু বিভাগ সরকারকে ৩৬ হাজার কোটি টাকা প্রদান করবে। এছাড়া নদী শাসনসহ সেতুর মেইনটেন্যান্স খরচ রয়েছে।
সূত্র জানায়, টোল আদায়ের অর্থ থেকে সেতু রক্ষণাবেক্ষণ, টোল কালেক্টের খরচ এবং সরকারের লোন শোধ হবে। ৩৬ বছরে মধ্যে সরকারকে সুদ আসলসহ প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে সেতু বিভাগকে।
সেতু বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, প্রথম অর্থ বছরের টোল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক থাকলে, নির্ধারিত সময়ের আগেই ব্যয় উঠে আসবে। রক্ষণাবেক্ষণ খরচসহ এই সময়ের মধ্যে লাভের মুখ দেখবে কর্তৃপক্ষ। যমুনা সেতুতে নির্ধারিত সময়ের আগেই খরচ উঠে আসে। এখন প্রতি অর্থবছরে ৬০০ কোটি টাকার বেশি টোল আদায় করছে যমুনা সেতু। সে হিসাবে পদ্মা সেতুর ব্যয়ও নির্ধারিত সময়ে উঠবে।
সোনালীনিউজ/আইএ