ঢাকা: লাল-সবুজের পতাকাবাহী জাতি স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে গৌরব ও মর্যাদার এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। যে গৌরবের আলো আজ ফকাফকা গোটা দেশ। এই মহান অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব দরবারে বাঙালি জাতি এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাল।
প্রমত্তা পদ্মা নদীর উপর নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি আর স্বপ্ন নয়। এটা এখন বাস্তবতা। মেগা কাঠামো নির্মাণ বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে নতুন উচ্চতায়।
সেতুর উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইতিহাসের এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে আমরা। এ সেতু নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ পরার্শক, ঠিকাদার, প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ, শ্রমিক, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ধন্যবাদ জানাই পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের অধিবাসীদের যাদের জমিজমা ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের এই ত্যাগ ও সহযোগিতা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।
তিনি বলেন, কোটি কোটি দেশবাসীর সঙ্গে আমিও আজ আনন্দিত, গর্বিত এবং উদ্বেলিত। অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জ্বালা ছিন্ন করে প্রমত্ত পদ্মার বুকে আজ বহু কাঙ্ক্ষিত সেতু দাঁড়িয়ে গেছে। এ সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহার কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয় এ সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা আর জেদ।
সরকার প্রধান বলেন, ষড়যন্ত্রের ফলে আমাদের সেতু নির্মাণ খানিকটা বিলম্বিত হয়েছে, কিন্তু আমরা হতোদ্যম হইনি। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমর আলোর মুখ দেখেছি। পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি আলোর ঝলকানি। ৪১টি স্পন যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ 'দাবায়ে রাখতে পারবে না, পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।। তারুণ্যের কবি, দ্রোহের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যের ভাষায় তাই বলতে চাই: সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়। আমরা মাথা নোয়াইনি।
পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের ১.২ বিলিয়ন ডলার তহবিল প্রত্যাহারের পর সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের ৫৬,০০০ বর্গমাইল ভূমিতে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে বাংলাদেশকে পর নির্ভরশীলতার থেকে বেরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
পদ্মা সেতু দেশের সম্ভাবনা ও সমৃদ্ধির নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। এটি দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করে জাতীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সহায়তা করবে।
সেতুটি নির্মাণ করে বাংলাদেশ এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে যে বিদেশি ঋণদাতাদের সহায়তা ছাড়া কোনো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিচক্ষণ ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে তা সম্ভব করেছেন।
যদিও কিছু অর্থনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবী নিজস্ব সম্পদে সেতু নির্মাণের বিষয়ে তাদের সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা তার সরকার কিভাবে সেতু নির্মাণের জন্য তহবিলের ব্যবস্থা করবে তার বাস্তবিক এক পরিকল্পনা করেছিলেন।
২০১২ সালের জুনে বিশ্বব্যাংক সেতু প্রকল্প থেকে তার তহবিল প্রত্যাহার করার মাত্র নয় দিনের মাথায়, দেশটি নিজস্ব তহবিল দিয়ে দেশের বৃহত্তম সেতু নির্মাণে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই মানুষের ভাগ্যের অনেক পরিবর্তন হয়। অভ্যন্তরীণ সম্পদ দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ তার সম্মান ফিরে পেয়েছে। আমাদের দেশের কিছু লোকের ধারণা যে আমরা অন্যের টাকা ছাড়া কিছুই করতে পারি না।
সোনালীনিউজ/আইএ