ঢাকা : আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে নৌপথে নির্বিঘ্নে যাত্রী চলাচলের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। পদ্মা সেতুর কারণে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ জনপদে নির্বিঘ্নে যাতায়াতের সুযোগ হলেও স্বল্প খরচ, নিরাপত্তা ও আরামদায়ক ভ্রমণ সুবিধার জন্য সদরঘাটে যাত্রী পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন না লঞ্চ মালিকরা।
তবে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্যোগে যাত্রীসেবা নিশ্চিত, নৌরুট ব্যবস্থাপনা নৌযান পুনর্বিন্যাস, কো-অর্ডিনেশনসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হওয়ায় আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষ নৌপথে সুষ্ঠু ও নিশ্চিতভাবে চলাচলের আশা প্রকাশ করছেন।
বর্তমানে সারাদেশে ১০৭টি নৌপথের মধ্যে ৪৩টি পথ ঢাকার সদরঘাট থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের সংযোগকারী। এই ৪৩টি নৌরুটে চলাচলকারী লঞ্চের সংখ্যা প্রায় দুইশ। আর শিমুলিয়া থেকে মাঝিরকান্দি ও বাংলাবাজারে চলাচল করে ৮৭টি লঞ্চ।
লঞ্চ মালিকরা বলেছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর শিমুলিয়া (মাওয়া) থেকে বাংলাবাজার ও মাঝিরকান্দি রুটে সরাসরি প্রভাব পড়লেও সার্বিকভাবে দেশের লঞ্চ ব্যবসায় তেমন প্রভাব পড়বে না। জরুরি প্রয়োজনে অনেকেই হয়তো সড়কপথে গন্তব্যে যাবেন, কিন্তু স্বস্তির যাত্রা খুঁজবেন নৌপথেই। সেই আত্মবিশ্বাস থেকে এখনো নতুন নতুন লঞ্চ নির্মাণও করছেন লঞ্চ মালিকরা।
আর সদরঘাটের যাত্রীরা বলছেন, শুরুতে পদ্মা সেতুর দেখার জন্য তারা দু-একবার সড়কপথে বাড়ি যাতায়াত করতে চান। তবে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য লঞ্চকেই বেছে নেবেন।
সদরঘাট থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভোলা, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও চাঁদপুরে চলাচলকারী লঞ্চে যাত্রী পেতে বেগ পেতে হবে বলে মনে করছেন না লঞ্চ ব্যবসায়ীরা। তবে শুরুতে কিছুটা প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন তারা। তবে পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ঢাকা বন্দরের টার্মিনাল ভবনে সোমবার নিরাপদ নৌযান ও যাত্রী চলাচলের বিষয়ে এক আলোচনা সভা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সভায় ঢাকা নদী বন্দরের সদরঘাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ও যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য আনসারসহ কমিউনিটি পুলিশের ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আগামীকাল ৭ জুলাই হতে ৯ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন ৪০ জন করে বিএনসিসি সদস্য নিয়োজিত থাকবে।
এছাড়া নদীবন্দরের নৌনিট্টা বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে ঈদের আগে ও পরে যে দিনগুলোতে যাত্রী চাপ বেশী হবে সে দিনগুলিতে রোভার স্কাউটও নিয়োজিতসহ ৫৯টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাপ) সংস্থার সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. বদিউজ্জামান বাদল বলেন, এখন বর্ষা মৌসুম। এ সময়ে চাঁদপুর মোহনাসহ কিছু স্থানে ঘূর্ণার্ত দেখা দেয়। এ সকল জায়গায় দুর্ঘটনা রোধকল্পে যথাযথভাবে মার্কিং (বয়া,বাতি, মার্কা দ্বারা) করতে হবে। ফিরতি যাত্রীসাধারণ যাতে নিরাপথে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারে সে জন্য পুলিশকে আরো বেশি সজাগ থাকতে হবে বলে তিনি জানান।
লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব সহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদের সময় সদরঘাটে যাত্রী সাধারণের নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন চলাচলের স্বার্থে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত বাস, ট্রাক ও লেগুনা যাতে এলোমেলোভাবে রাস্তায় না থাকে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া ধোলাইখাল ও নয়ারহাটে যাতে গরুর হাট বসতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম জানান, ঈদের ১০ দিন এবং পরের ১০ দিন নৌযানে মোটরসাইকেল পারাপার বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া পথিমধ্যে লঞ্চে যাত্রী ওঠানো রোধকল্পে নৌপুলিশ ও কোস্ট গার্ডকে সজাগ থাকতে হবে এবং দুর্ঘটনা রোধকল্পে পথিমধ্যে নৌযানের প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা-৪ মো. হায়দার আলী বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে গুলিস্থান থেকে সদরঘাট এলাকায় কোনো গুরুর হাট বসতে দেয়া হবে না। রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হবে এবং রাতের বেলায় রাস্তায় পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা জানান।
ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাহবুবর রহমান বলেন, কোরবানির গরুবাহী ট্রাকগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে আলাদা ফেরিতে পারপার করার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে বলে জানান। তিনি বলেন, বিভিন্ন সংস্থা পরস্পরের মধ্যে সমন্বয় করে স্ব-স্ব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে আসন্ন ঈদ যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হবে। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে তিনি সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বিআইডব্লিউটিএ নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর বরিশাল রুটের যাত্রী কিছুটা কমবে। তবে ভোলা, হাতিয়া, বরগুনা রুটে যাত্রী তেমন কমার সম্ভাবনা নেই। তার পরেও আমরা সারা দেশের লঞ্চঘাটগুলো নিরাপদ রাখার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সারা দেশের লঞ্চঘাটগুলো নিরাপদ রাখার জন্য জোরদার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আসন্ন ঈদে ঘরমুখো ও ফিরতি মানুষ লঞ্চে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)- এর চেয়ারম্যান আহমদ শামীম আল রাজী বলেন, আসন্ন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীসাধারণের যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার ক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিসি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সারা দেশের ফেরিঘাটে রেকার রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে সন্দ্বীপ যাতায়াতের জন্য সী-ট্রাক চালু করা হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান গোলাম সাদেক বলেন, আসন্ন ঈদে ঘরমুখো এবং ফিরতি যাত্রীসাধারণের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে অন্যান্য সংস্থাসমূহের সাথে সমন্বয় করে বিআইডব্লিউটিএ সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। নিরাপদে নৌচলাচলের স্বার্থে নৌপথে প্রয়োজন অনুযায়ী মার্ক, বয়া, বাতিসহ নানা বিষয়ে স্থাপনা করা হবে বলে তিনি জানান।
এছাড়া নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর আবু জাফর মো. জালাল উদ্দিন বলেন, আসন্ন ঈদে ঘরমুখো ও ফিরতি মানুষের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে নৌপরিবহন অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
তিনি জানান, সদরঘাটসহ বিভিন্ন ঘাট ও পয়েন্টে নৌপরিবহন অধিদপ্তর ৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। রাতের বেলায় স্পিডবোট চলাচল করতে দেয়া হবে না।
তিনি আরো জানান, পথিমধ্যে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলে নৌযানের সংশ্লিষ্ট মাস্টার ও ড্রাইভারদের সনদ বাতিল করা হবে বলে জালাল উদ্দিন জানান।
সোনালীনিউজ/এমটিআই