বিদ্যুৎ খাতে কমছে গ্যাস সরবরাহ!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২২, ০৩:২২ পিএম

ঢাকা : আমদানি ব্যয় মেটানোর যুক্তিতে গত মাসে বাড়ানো হয়েছে এলএনজির (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) দাম। এর আগে ২০১৯ সালের জুলাইয়েও একই যুক্তিতে দাম বাড়ানো হয়েছিল গ্যাসের। তবে দাম বাড়ালেও কোনো খাতেই চাহিদা অনুপাতে গ্যাস দিচ্ছে না পেট্রোবাংলা। বিদ্যুৎ খাতে এ চিত্র সবচেয়ে খারাপ। প্রতিদিন এ খাতে গ্যাস সরবরাহ কমছে। ফলে গত কয়েকদিন ধরে দেশব্যাপী চলছে বড় ধরনের লোডশেডিং।

তথ্যমতে, ২০১৯ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সময় বিদ্যুৎ খাতে ন্যূনতম দৈনিক এক হাজার ২৪৩ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহের শর্ত দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। যদিও বিদ্যুৎ খাতে কখনোই সে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করেনি পেট্রোবাংলা। বিভিন্ন সময় এর পরিমাণ ওঠানামা করেছে। তবে দৈনিক গড়ে এক হাজার থেকে এক হাজার ১৫০ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ করা হতো বিদ্যুৎ খাতে।

যদিও হঠাৎ বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ আরও কমিয়ে দিয়েছে পেট্রোবাংলা। গত ১০ দিনের বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ কমেছে ২৬৭ দশমিক ৫০ এমএমসিএফ তথা ২৩ শতাংশ। এর মূল কারণ, এলএনজি আমদানি কমিয়ে দেয়া। আর গ্যাস সরবরাহ কমার প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে।

গত ৩ জুলাই উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল ৮১০ মেগাওয়াট। তবে ৪ জুলাই তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ১৮২ মেগাওয়াট। আর ঘাটতি মোকাবিলায় সারাদেশে চলছে লোডশেডিং। তবে গ্যাস সরবরাহ না বাড়লে এ পরিস্থিতি আপাতত উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, ২৬ জুন বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৬৭ এমএমসিএফ। পরের দিন তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় এক হাজার ১৩৬ দশমিক ৬০ এমএমসিএফ। পরের তিন দিন এ পরিমাণ আরও কমলেও এক হাজার এমএমসিএফের ওপরেই ছিল। এর মধ্যে ২৮ জুন বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস দেয়া হয় এক হাজার ৯২ দশমিক ৯০ এমএমসিএফ, ২৯ জুন এক হাজার ৮১ দশমিক ৪০ এমএমসিএফ ও ৩০ জুন এক হাজার ৬২ দশমিক ১০ এমএমসিএফ।

নতুন অর্থবছরের শুরুতে গ্যাস সরবরাহ আরও কমতে থাকে। এর মধ্যে ১ জুলাই গ্যাস সরবরাহ করা হয় ৯৯০ দশমিক ৭০ এমএমসিএফ, ২ জুলাই ৯৯২ দশমিক ৬০ এমএমসিএফ, ৩ জুলাই ৯৬০ দশমিক ৬০ এমএমসিএফ ও ৪ জুলাই ৯১৩ দশমিক ১০ এমএমসিএফ। বুধবার তা আরও কমে দাঁড়ায় ৮৯৭ দশমিক ৫০ এমএমসিএফ।

পেট্রোবাংলা বলছে, বিশ্ববাজারে প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম ৩৮ ডলার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ তা কেনা হয়েছে ২৫ ডলারে। দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় আপাতত স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) এলএনজি থেকে কেনা হচ্ছে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত মাসে স্পট মার্কেট থেকে তিন কার্গো (জাহাজ) এলএনজি এসেছে। তখন দিনে ৭৫ থেকে ৮০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে। তবে জুলাইয়ের শুরু থেকে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০-৬০ কোটি ঘনফুট। এখন শুধু দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ওমান ও কাতার থেকে এলএনজি আনা হচ্ছে।

যদিও এলএনজি আমদানির দায় মেটাতেই গত মাসে সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ সময় বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহূত গ্যাসের জন্য প্রতি ইউনিটের দাম পড়ছে পাঁচ টাকা দুই পয়সা। আগে এ হার ছিল চার টাকা ৪৫ পয়সা।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সারাবিশ্বই সাশ্রয়ী হচ্ছে। দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় আপাতত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে বিদ্যুৎসহ সব খাতেই গ্যাস সরবরাহ কিছুটা কমেছে। তবে বিদ্যুৎ খাতে তেলচালিত কিছু কেন্দ্রও বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। তবে দাম কমলে স্পট থেকে আবারও এলএনজি আমদানি করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ খাতে গত জানুয়ারির পর থেকে ভর্তুকি বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামও অনেক বেড়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে তেলচালিত কিছু কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তবে দ্রুতই এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে আশা করা যায়।

যদিও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল এ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক সময় নির্ধারণ করে দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, এমনকি আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি যেমন বেড়েছে, তেমনি সেখানে বিদ্যুতের জন্যও এখন হাহাকার। তারা বলেই দিয়েছে, দিতে পারবে না। এরকম নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সংকটের কথা মাথায় রেখে ‘সতর্ক হয়ে চললে’ সমস্যা এড়ানো যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। রোদ ও ভ্যাপসা গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিদ্যুতের অভাবে কোনো কোনো গ্রাহক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। অনেকে বিরক্তি প্রকাশ করে দিচ্ছেন ফেসবুকে পোস্ট। যদিও এর আশু সমাধান কেউ দিতে পারছেন না।

সোনালীনিউজ/এমটিআই