ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফর ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও একান্ত বৈঠক করার পাশাপাশি অভিন্ন সীমান্ত নদী কুশিয়ারা থেকে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারসহ ভারতের সঙ্গে ৭টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি প্রাপ্তি নিয়েই সফর শেষ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে আলোচনাকে বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দ্রুত ভারত থেকে ডিজেল আমদানি শুরু করতে পারলে কেটে যাবে সংকট। আর কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহারের ফলে দেশের কয়েকটি উপজেলার কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ২ দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে ৭টি। তবে আনুষ্ঠানিক চুক্তির বাইরে গিয়েও এই সফর থেকে বেশকিছু প্রাপ্তি রয়েছে বাংলাদেশের। যার মধ্যে রয়েছে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানিতে ফ্রি ট্রানজিট, ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রপ্তানিতে বন্ধের আগে আগাম জানিয়ে দেওয়া ও সীমান্তে প্রাণহানি শূন্যে নামিয়ে আনার মতো ঐকমত্য।
তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে ভারত থেকে ডিজেল ও বিদ্যুৎ আমদানির আলোচনাকে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের বাজারে সৃষ্টি হওয়া জ্বালানি সংকট নিরসনে বড় ভূমিকা রাখবে এই সিদ্ধান্ত। পাশের দেশ থেকে ডিজেল আনলে কমবে পরিবহন ব্যয়। এমনকি উৎপাদনে আসতে পারবে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ভারত থেকে জ্বালানি আমদানির ফলে সংকট মোকাবিলা করা যাবে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আনতে পারলে পরিবহন খরচ কমে যাবে।
এদিকে কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টনে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তে কৃষিক্ষেত্রে আসবে বড় ধরনের পরিবর্তন। বিশ্লেষকরা বলছেন, সেচের পানির অভাবে বিপর্যস্ত সিলেট অঞ্চলের বেশ কয়েকটি উপজেলার কৃষক এবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, পাম্প বসিয়ে ৫ হাজার একরে শীতকালে সেচের সুবিধা হবে।
সাবেক পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, জকিগঞ্জ উপজেলা সবচেয়ে উপকৃত হবে। এর সঙ্গে কানাইঘাট, বিয়ানীবাজারের কয়েকটি এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।
২০১০ সালে সেচের জন্য ওই অঞ্চলে পাম্পহাউস নির্মাণের পরও এই চুক্তির জন্য বাধা হয়ে ছিল কুশিয়ারা থেকে পানি উত্তোলন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে ৪ দিনের সরকারি সফর শেষ করেন বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর)। শেষ দিনে তিনি ভারতের রাজস্থানে আজমির শরিফে সুফি সাধক হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির (রহ.) দরগাহ জিয়ারত ও মোনাজাতের মাধ্যমে সফর শেষ করেন। এর আগে ৫ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
সোনালীনিউজ/এমটিআই