ঢাকা: করিডোর মহাসড়ক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রথমধাপে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের (এন-৮) ৪০ কিলোমিটার একাংশকে গোয়েন্দা নজরদারিতে নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে করে দূর্ঘটনা, যানজট, গতিসীমা অতিক্রমকারী গাড়ি শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে।
সড়কে চলাচলকারী প্রতিটি যানবাহনকে রিয়েল টাইম সার্ভিলেন্সের আওতায় আনার লক্ষ্যে সড়ক অবকাঠামো এবং সড়ক ব্যবস্থাপনাকে ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিষ্টেম (আইটিএস) প্রযুক্তির সাথে সংযোগ স্থাপন করা হবে। কোরিয়ান অর্থায়নে প্রকল্পে ১৬ পরামর্শকে খরচ প্রায় ১০ কোটি টাকা। আগামী মঙ্গলবার প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপন করা হবে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে আইটিএসের মাষ্টারপ্লান প্রস্তুত করা, সওজ’র সদর দফতরে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সেন্টার স্থাপন এবং পাইলটিং হিসেবে এন-৮ এর ৪০ কিলোমিটার সড়কাংশের আইটিএস প্রয়োগ করা হবে। সাড়ে তিন বছরে এই প্রকল্পটির কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।
আইটিএ সিষ্টেমে সড়ক নেটওয়ার্ককে একটি একক নজরদারী ব্যবস্থার আওতায় আনয়নের মাধ্যমে সড়কে যানবাহনের পরিমাণ, গতি, দূর্ঘটনা ইত্যাদি তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে সড়ক পর্যবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিট, ট্রাফিক ম্যাসেজমেন্ট সেন্টার (টিএমসি) এর কাছে প্রেরণ করা হয়। তারা প্রাপ্ত তথ্য বিশ্ষেণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করবে। ফলে সময় ও জ্বালানী সাশ্রয়ী, যানজট ও দুষণমুক্ত এবং সর্বপরি দূর্ঘটনামুক্ত একটি দক্ষ সড়ক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়।
আইটিএস প্রযুক্তির বিষয়ে এবং আইটিএস পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত জনবলের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২২ কোটি ৩ লাখ টাকা। যার মধ্যে কোরিয়ান আন্তর্জাতিক সহযোগীতা সংস্থা (কোইকা) অনুদান হিসেবে দিচ্ছে ৮৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর বাংলাদেশ সরকারের ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো হলো, পরামর্শক সেবা (টিএমসি পরিচালনার জন্য) ১৬জন, ৫০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন, একশ’টি ভৌত কাজ, ২৫০ বর্গ মিটার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সেন্টার স্থাপন (টিএমসি), আইটিএস মাষ্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, সিসি ক্যামেরা বা স্প্রীড এনফোর্সমেন্ট ক্যামেরা বা ভেরিয়েবল ম্যাসেজ সাইন বা ভেহিকেল ডিটেকশন সিস্টেম স্থাপন, আইটিএস বাস্তবায়নে সংশ্বিলস্ট জনবলকে দক্ষ করতে প্রশিক্ষণ।
খরচ ধরা হয়েছে, পরামর্শক সেবা (টিএমসি পরিচালনার জন্য) ১৬জন বা ৫৭৬ জনমাসে ৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রতি জনে প্রতি মাসে খরচ ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। ৫০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপনে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা, একশ’টি ভৌত কাজে ব্যয় ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা, ২৫০ বর্গ মিটার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সেন্টার স্থাপন (টিএমসি) খরচ ২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, আইটিএস মাষ্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, সিসি ক্যামেরা বা স্প্রীড এনফোর্সমেন্ট ক্যামেরা বা ভেরিয়েবল ম্যাসেজ সাইন বা ভেহিকেল ডিটেকশন সিস্টেম স্থাপন, আইটিএস বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট জনবলকে দক্ষ করতে প্রশিক্ষণে মোট ব্যয় ৮৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর দু’সিটি করপোরেশনকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
প্রকল্পটি নিয়ে পর্যালোচনায় হাইওয়ে পুলিশের তথ্য হলো, বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একই ধরণের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যেখানে চারটি টিএমসি স্থাপন করা হচ্ছে। আর প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আওতায় সওজ’র প্রধান কার্যালয়ে একটি মাত্র টিএমসি স্থাপন করা হয়েছে। ফলে যানবাহনের রিয়েল টাইম সার্ভিলেন্স তথ্য হাইওয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে পাবে না। তাৎক্ষণিক প্রতিকারের জন্য হাইওয়ে পুলিশ সদর দফতরে একটি টিএমসি স্থাপন করতে হবে। হাইওয়ে পুলিশকে সিষ্টেমে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে।
ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, প্রস্তাবনাটি গভীরভাবে পর্যালোচনা করে কিছু সুপারিশ দেয়া হয়েছে। সেই আলোকে ডিপিপিটি আবার পূনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে আসে। সেটাকে আমরা পর্যালোচনা করি। সে সময় ব্যয় ধরা হয় ১১৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে ব্যয় এখন ৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বেড়ে হয়েছে ১২২ কোটি ৩ লাখ টাকা। বিভিন্ন দূর্ঘটনা রোধে ও সড়ক নিরাপত্তায় প্রকল্পটি অবশ্যই সড়কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সোনালীনিউজ/এসআই/আইএ