ঢাকা: এক মাস পার হলেও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলার রহস্যভেদ হয়নি। এমনকি বান্ধবী বুশরা ছাড়া এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকেই গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এ মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দাবি, এ মামলায় অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। কোথায় হত্যা করা হয়েছে, কে করেছে এবং কখন ও কেন? এই বিষয়গুলোর উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে সর্বশেষ ফারদিনকে সুলতানা কামাল ব্রিজে দেখা গেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।
এমন পরিস্থিতিতে তাকে হত্যার পর ফেলা দেয়া হয় নাকি তিনি নিজেই পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কারণ ফারদিনের লাশ উদ্ধারের পরের দিন উদ্ধার করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুরন্ত বিপ্লবের মরদেহ। তার শরীরেও একই ধরনের আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। তবে নৌ-দুর্ঘটনায় পানিতে ডুবে বিপ্লবের মৃত্যু হয় বলে তদন্তে উঠে আসে। নৌকা থেকে পড়ে যাওয়ার পর পানির নিচে শক্ত কিছুর সঙ্গে লেগে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন উঠে আসে ময়নাতদন্তে। এমন পরিস্থিতে ফারদিনের মৃত্যুর বিষয়টি আত্মহত্যা কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তদন্ত তদারক সূত্রে জানা গেছে।
মামলার তদন্ত তদারক একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনার পর র্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তাদের হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ কারণে তাদের গ্রেফতারও দেখানো সম্ভব হয়নি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন-অর-রশিদ বলেন, ফারদিন হত্যার মামলা নিয়ে অনেকে অনেক কিছু লিখছেন এবং বলছেন। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের কোনো তথ্য ডিবির কাছে নেই। এমনকি রিমান্ডেও বুশরা উল্লেখযোগ্য তথ্য দিতে পারেনি। কিছু বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন। সেগুলোর সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র আছে বলে মনে হচ্ছে না। তারপরও ডিবি সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব রেখেই তদন্ত এগিয়ে নিচ্ছে। কোথায় হত্যা করা হয়েছে, কে করেছে এবং কখন ও কেন এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আদৌ তিনি হত্যার শিকার হয়েছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, বেশ কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত চলছে। ফারদিনের কাছের কোনো বন্ধুর সঙ্গে পূর্বশত্রুতা ছিল কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে। নারীঘটিত কোনো বিষয় আছে কিনা খতিয়ে দেখছি। ফেসবুক ও ল্যাপটপের সূত্র ধরে কিছু বিষয় জানার চেষ্টা চলছে। মাদকসংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় আছে কিনা তাও জানার চেষ্টা চলছে। প্রকৃত অর্থে ফারদিনকে কোথায় হত্যা করা হয়েছে সেটি আগে বের করার চেষ্টা চলছে। এমনকি স্পেনের একটি বিতর্ক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সামর্থ্য ছিল না ফারদিনের। এ কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ময়নাতদন্ত প্রস্তুতকারী চিকিৎসকের সঙ্গে কথাও বলেছেন ডিবির কর্মকর্তারা। চিকিৎসক এ সময় হত্যার বিষয়টি ভিসেরা রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না বলে মতামত দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তার দেয়া তথ্যমতে, ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়ার পর ফারদিন পানিতে বাড়ি খেতে পারেন। এছাড়া নদীতে ডুবে যাওয়ার পর ট্রলার বা অন্য কোনো নৌযানের সঙ্গেও ধাক্কা লাগতে পারে। এ কারণেও তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকতে পারে। এসব বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে লেগুনা চালকসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা ফারদিনকে সুলতানা কামাল ব্রিজের সামনে নামিয়ে নেয় বলে জানান। ওই লোকেশন থেকে ফারদিনের মোবাইলের উপস্থিতি চনপাড়ার বস্তির ও আশপাশের এলাকা দেখাতে পারে। এ কারণে শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে পুলিশ এ বিষয়ে কাউকে গ্রেফতার দেখাবে না। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এমনকি তাদের অনুমতি ছাড়া ঢাকার বাইরে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ নভেম্বর দুপুর ৩টার দিকে ফারদিন বুয়েটের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফারদিন। এরপর থেকে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ৫ নভেম্বর বিকেলে তার বাবা নুরুদ্দিন রামপুরা থানায় জিডি করেন। ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে নৌ পুলিশ সদস্যরা তার লাশ উদ্ধার করে। এই ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হলে পুলিশ ফারদিনের বান্ধবী বুশরাকে গ্রেফতার করে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়। রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন বুশরা।
সোনালীনিউজ/এম