ভূমির নামজারি আবেদন নিষ্পত্তিতে ৭ নির্দেশনা 

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২২, ০৭:৫৩ পিএম

ঢাকা: ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাসহ নাগরিকদের জন্য উন্নত ভূমিসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভূমির নামজারি আবেদন নিষ্পত্তিতে কতিপয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। 

রোববার (৪ ডিসেম্বর) ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশন মনিটরিং সেল থেকে এক পরিপত্রের মাধ্যমে নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে। 

এতে বলা হয়েছে, নামজারি সেবার মান বৃদ্ধিতে আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে সহকারী কমিশনারগণ (ভূমি) নিম্মোক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন। 

১। অনেক সময় ওয়ারিশ সনদ হালনাগাদ নয় মর্মে নামজারী আবেদন বাতিল করা হয়। হালনাগাদের মেয়াদ সম্পর্কে স্পষ্টীকরণ না থাকায় বিভিন্ন ধরণের সিদ্ধান্ত প্রদান করা হচ্ছে। এর ফলে নামজারি সেবার মান বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই এখন থেকে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর ইস্যুকৃত ওয়ারিশ সনদের মেয়াদ উন্মুক্ত থাকবে। সরকারের প্রত্যয়ন সিস্টেমের সঙ্গে নামজারি সিস্টেমের আন্তঃসংযোগ স্থাপিত হলে ওয়ারিশ সনদ প্রত্যয়ন সিস্টেম হতে গ্রহণ করতে হবে। যদি ওয়ারিশ সনদপত্রে উল্লেখিত নামের সাথে দলিলে উল্লিখিত নাম বা নামজারি আবেদনকারীর নামের ভিন্নতা থাকে, তাহলে জাতীয় পরিচয়পত্র/ জন্মনিবন্ধন সনদপত্র অনুযায়ী ওয়ারিশ সনদপত্র দাখিল করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। 

২। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আবেদনকারীকে যুক্তি/তথ্য-উপাত্ত প্রদান করার সুযোগ না দিয়ে সরাসরি না-মঞ্জুরের আদেশ প্রদান করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনে উত্থাপিত সকল ধরনের আপত্তির বিষয়ে আত্ম-পক্ষের সুযোগ দিতে হবে। তথ্য-উপাত্ত ও আপত্তির বিষয়ে আবেদনকারীর বক্তব্য বিবেচনায় নিয়ে আদেশ প্রদান করতে হবে। 

৩। অধিগ্রহণ সংক্রান্ত ধারণাগত অস্পষ্টতায় বিভিন্ন নামজারি আবেদন বাতিল করা হচ্ছে। অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নিম্নরূপ বিষয়ে বিবেচনা করা প্রয়োজন: 
ক) স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৭-এর ধারা (৪) এর নোটিশ জারির পর অধিগ্রহণ প্রস্তাবিত জমির নামজারি বন্ধ রাখা যাবে না। নোটিশ জারির পূর্বে সম্পাদিত দলিলের ভিত্তিতে বা উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা পরিবর্তিত হলে অধিকরণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার স্বার্থে নামজারি করা যাবে। এক্ষেত্রে খতিয়ানের মন্তব্য কলামে "শুধুমাত্র এলএ কেস এর ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির জন্য প্রযোজ্য" উল্লেখ করতে হবে। স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৭-এর ধারা ৪ (১২) মোতাবেক জেলা প্রশাসক অধিগ্রহণ প্রস্তাবিত জমির ক্রয়-বিক্রয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করলে উক্ত জমির ক্রয়-বিক্রয় অধিগ্রহণ আইনের (৪) ধারার নোটিশ জারির পরে সম্পাদিত হলেও নামজারি করা যাবে এবং খতিয়ানে "শুধুমাত্র এলএ কেস এর ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির জন্য প্রযোজ্য" উল্লেখ করতে হবে। 

খ) অধিগ্রহণকৃত জমি গেজেটভুক্ত হওয়ার পর পরই প্রত্যাশী সংস্থার অনুকূলে নামজারির ব্যবস্থা নিতে হবে। গেজেটভুক্ত হওয়ার পরে জেলা প্রশাসক প্রত্যাশী সংস্থাকে অনতিবিলম্বে নামজারি করার জন্য লিখিতভাবে অবহিত করে এর অনুলিপি সহকারী কমিশনার (ভূমি)'কে প্রদান করবেন। ইতিপূর্বে যে সকল জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, জেলা প্রশাসক রেকর্ড হালনাগাদের স্বার্থে উক্ত গেজেটসমূহের অনুলিপি দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রত্যাশী সংস্থাকে নামজারি করার জন্য অনুরোধ জানালে বিষয়টি ত্বরান্বিত হবে। 

৪। রাজউক, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন হাউজি আওতাভুক্ত এলাকায় নামজারির জন্য বর্তমানে খতিয়ান নম্বর প্রদানের জন্য বিভিন্ন নম্বর ব্যবহার করা হচ্ছে। এই সকল ক্ষেত্রে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক অভিন্ন খতিয়ান নম্বর প্রদান পদ্ধতি নির্ধারণ না করা পর্যন্ত বিদ্যমান নম্বর চালু রাখা যেতে পারে। তবে খতিয়ানের মন্তব্য কলামে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাদ্দকৃত ভূমির তথ্য (প্লট নম্বর, রোড, ব্লক ইত্যাদি) বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করতে হবে। 

৫। বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)'র ওয়ান স্টপ সার্ভিস সিস্টেম হতে প্রেরিত সকল আবেদন ভূমি মন্ত্রণালয়ের ২৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখের ৩১.০০.০০০০.০৪৬.৬৮.০১৭.১৬.৫৩ নং স্মারকে বর্ণিত পদ্ধতি ও সময়সীমার মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। 

৬। ক) ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১৯ জানুয়ারি ২০২০ তারিখের ৩১,০০,০০০০.০৪৬.৬৮.০১৭.১৬.৫৩ নম্বর স্মারকে নামজারির আবেদন নিষ্পত্তির সর্বোচ্চ সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও শুনানির প্রয়োজনীয়তা ছাড়া অন্য কোনো পর্যায়ে নথি প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম সময় নির্ধারিত নেই বিধায় আবেদনসমূহ নির্ভুলভাবে যতটা সম্ভব দ্রুত নিষ্পত্তি করা যেতে পারে। ইউনিয়ন ভূমি অফিস হতে যথাসম্ভব ঐ মানুযায়ী প্রস্তাবপত্র / প্রতিবেদন সর্বোচ্চ ৭ দিনের মধ্যে প্রেরণ করতে হবে। যদি কোনো প্রস্তাবপত্র প্রদানে যৌক্তিক কারণে অধিক সময় প্রয়োজন হয় অথবা ক্রমানুযায়ী প্রেরণ করা না যায়, তাহলে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাসহ সহকারী কমিশনার (ভূমি)'কে প্রস্তাবপত্র / প্রতিবেদন প্রেরণ করতে হবে। 

খ) আবেদন নিষ্পত্তি করতে ১ম আদেশে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার পাশাপাশি কানুনগো / সার্ভেয়ারের মতামতের জন্য প্রেরণ করা যেতে পারে। উভয় পর্যায় থেকে প্রতিবেদনে যদি ভূমি সংক্রান্ত আইন / বিধি / পরিপত্র অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট কোনো দলিলাদি অথবা ব্যাখ্যা আবেদনকারীর নিকট হতে প্রয়োজন হয়, তাহলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শুনানির সময় তা সঙ্গে আনার জন্য তাকে অনুরোধ করবেন। 

৭। জনস্বার্থে এ পরিপত্র জারি করা হলো এবং অবিলম্বে এ আদেশ কার্যকর হবে। 

সোনালীনিউজ/আইএ