ফারদিন হত্যার তদন্তে ৫২২টি ফোন নাম্বারের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ : ডিবি

  • নিজস্ব প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২২, ০৪:৩৮ পিএম
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ঢাকা : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর পর গত ৩৮ দিনে বিভিন্ন ভাবে তদন্ত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ফারদিন গত দুই বছরে ৫২২টি ফোন নম্বরে কথা বলেছেন। এই প্রত্যেকটি ফোন নম্বর ব্যবহার কারির সঙ্গে আলাদা করে গোয়েন্দা পুলিশ কথা বলেছে। তাদের সবাইকে গোয়েন্দা নজরদারিতে আনা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ফারদিনের সহপাঠিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সে কোনো দিন বাবুবাজার ব্রিজ ও সুলতানা কামাল ব্রিজে যায় নি৷ সে বুশরাকে নামিয়ে দিয়ে সে রাত সাড়ে ৯টা থেকে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছেন। এমন কি সে গত দু বছরে ৫২২টি নাম্বারে কথা বলেছে। আমরা সবার সঙ্গেই কথা বলেছি। সে নোবেল পড়তো, সে আলবার্ট ফেমো ও নিটসের বই পড়তেন। সেখানে সে পরিবার, জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার এক বান্ধবীকে বলেছিল, ৩০ বছরের বেশি কারও বাঁচার একতিয়ার হওয়া উচিৎ না। আবার আরেক কথা বকেছেন, আমি যদি মারা যাই। বন্ধু সাজ্জাদ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবে। এবং আরেকটি যায়গায় তার বন্ধুকে বলেছে, দেখবা কোনো এক শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবা হয় তো বে কেউ....., আত্নহত্যার কথা  বলেছে। এবং সে শুক্রবারেই কিন্তু আত্মহত্যা করেছে। তার বন্ধুবান্ধবদের কাছে বিভিন্ন কথা বলা, একা একা ঘুরাঘুরি করা....।

তদন্তের বিষয়ে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, আমরা ৩৮ দিন মামলাটি তদন্ত করেছি। আমরা আগেও বলেছি তার মানুষি স্বাস্থ্যের কথা, মানষিক অবস্থার কথা আমরা আপনাদের বলেছি। সে যে বিভিন্ন সময়ে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছেন। কোথাও কোনো যায়গায় তার সঙ্গে কেউ ছিলো না। সে একবার রাত ১০-১১ টার দিকে এটেম নিয়েছিলো বাবুবাজার ব্রিজে। কিন্তু সেখানে ওই সময়ে অনেক লোকজন ছিলো। সে ব্যর্থ হয়। আবার সে নিজের নিজে কথা বলে জনসন রোড, সেখান থেকে গুলিস্তান, সেখান থেকে যাত্রাবাড়ী গেলেন। যাত্রাবাড়ি থেকে লেগুনায় করে সে ২টা ৩৪ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের এক সাইডে নামেন। কিন্তু তখন আমরা আগেও বলেছিলাম চনপাড়া বস্তিতে সে কখনো যায় নাই। আমরা ৩৮ দিন তদন্ত শেষে আমরা বলেছি এটা একটি আত্মহত্যার ঘটনা। এখানে কেউ তাকে হত্যা করেনি। 

গোয়েন্দা প্রধান বলেন, আজ আমাদের ডিবিতে বুয়েটের শিক্ষার্থী এসেছেন। কি ভাবে আত্মহত্যা করেছেন। তারা আমাদের কাছ থেকে পুঙ্খনুপুঙখানুভাবে প্রায় তিন ঘন্টা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা তাদেরকে পুরো বিষয়টি বুঝিয়েছি। তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজনদের বুঝিয়েছি। এই এই কারণে সে আত্মহত্যা করেছে। ডাক্তারের যে সুরতহাল প্রতিবেদন সেখানেও কিন্তু তার গায়ে কোনো আঘাত নেই, বুতাম ছিলো, ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই, হাতের ঘড়ি, মোবাইল, টাকা সব কিছুই ছিলো। সে যে লাফ দিয়ে পড়েছে সেটাও আপনারা দেখেছেন। সব কিছু মিলিয়ে আমরা বলেছি এটি একটি আত্মহত্যার ঘটনা। আজকে তার বন্ধুরাও মোটামুটি একমত প্রকাশ করেছে।

হারুন বলেন, ভিক্টিম পরশ ছিলো ইন্ট্রোভাট। সে কারও কাছে কিছুই শেয়ার করত না। এবং তার পরীক্ষার রেজাল্ট যে খারাপ হচ্ছিলো সেটিও বলেনি। সে আরও একটি কথা বলেছে, ৯৫ ভাগ মানুষের জীবন পরিবার দ্বারা সীমাবদ্ধ। এটা থাকা ঠিক না। তার পরিবার তাকে বাসায় থাকতে বলতো, বাসায় থাকতে চাইতো না।  সব কিছু মিলিয়ে আমাদের তদন্তকারী দল যে সিদ্ধান্তে এসেছে হত্যার কোনো লক্ষ্মণ নেই। চনপাড়ায় যাওয়ার লক্ষ্মণ নেই, সেখানে কোনো দিনই যায় নি। অতীতে গত দুই বছরে রাতে যে সকল স্থানে ঘুরেছেন সেখানেও যায় নি।

মামলার বাদী আশ্বস্ত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। তদন্তকারী কর্মকর্তারা তার বাসায় গিয়ে বলে এসেছেন।

বুয়েটের শিক্ষার্থীরা কিছু কিছু গ্যাপের কথা বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের তদন্তে সব সময় বলা থাকে ভবিষ্যতে কোনো উদ্রেগ দেখা দেয় তখন আমরা আবার তদন্ত করবো। তারা আমাদের গ্যাপ দেখাবে না। আমরা তাদের বলেছি। তারা বলার চেষ্টা করেছে, লাশ যে পানিতে পড়েছে, সেটা কেউ দেখেছে কি না। বা কেউ তাকে ধাক্কা দিয়েছে কি না। কিন্তু যেহেতু সে (পরশ) আত্মহত্যা করবেন বলে সারারাত একা একা ঘুরেছেন। সেই যায়গা গুলোতে আগে কখনো যান নি৷ তার মনের কথা বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে যে ধরনের ক্থা বলেছেন, ম্যাসেজ, মোবাইলে যে কথা বলেছেন, আলোচনা করেছেন মোবাইলে ৫২২ টি নাম্বারে ক্কথা বলেছে। এবং ময়নাতদন্তেরর প্রতিবেদনে এসেছে তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।সব মিলিয়ে আমরা এই সিদ্ধান্ত এসেছে যে, সে আত্মহত্যা করেছে। 

লেগুনা থেকে দুজন নামার বিষয় পরিস্কার হওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে যাত্রাবাড়ীতে যে লেগুনা চালক তাকে নামিয়েছে। আমরা তাকে ১০-১২ বার জিজ্ঞাবাদ করেছি।

বুশরার বিষয়টি হবে জানতে চাইলে হারুন বলেন, বুশরাকে নামিয়ে দেওয়ার পরে বুশরার সঙ্গে তার এমন কোনো কথা হয় নি। শুধু একবার বুশরা জানতে চেয়েছে বাসায় ঠিকমতো  গেছে কি না। উত্তরে ফারদিন মিথ্যা বলেছে। সে শুধুমাত্র ইয়েস বলেছে। স্বাভাবিকভাবে বুশরার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় নি। তার মুক্তির বিষয়টি আদালতের বিষয়। আমরা আমাদের প্রতিবেদনে জানিয়ে দিবো তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয় নি।

সোনালীনিউজ/এলআই/এমএএইচ