রংপুর সিটি নির্বাচন

অনেক ভোটার মনে করছেন নির্বাচন পাতানো: সুজন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২২, ০৩:৫৭ পিএম

ঢাকা: রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কম বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘অনেক ভোটারই মনে করছেন, নির্বাচন পাতানো, কে নির্বাচিত হবেন, তা আগে থেকেই ঠিক করা।’

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) অনলাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বদিউল আলম এসব কথা বলেন। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনা করে তথ্য তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুজন। একই সঙ্গে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ কম। তারা বলছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রবল নয়। তাদের ধারণা, কী ফলাফল হবে আগে থেকেই নির্ধারিত। কোনো নির্বাচন নিয়ে এমন পরিস্থিতি কাম্য নয়।

সুজনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সুজন চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক সেকান্দার খান বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেই হবে না, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণও হতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আর আগ্রহ থাকবে না।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে বদিউল আলম বলেন, ‘সবই গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য না, না আর না। মনে হচ্ছে, গণমাধ্যমকর্মীদের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসির গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাওয়া প্রয়োজন, তার বদলে বিধিনিষেধ দিচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর ২৫৪ জন প্রার্থীর মধ্যে অর্ধেকের বেশির পেশা ব্যবসা। চাকরির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন ২৩ জন। আইনজীবী প্রার্থী আছেন দুজন। এদিকে ২০১৭ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ী প্রার্থীর হার সামান্য হ্রাস পেয়েছে।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৭০ শতাংশ প্রার্থীর আয় ৫ লাখের কম। এর মধ্যে সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমানের নিজস্ব কোনো আয় নেই। নিজের আয়ের ঘর খালি থাকলেও, নির্ভরশীলদের আয় দেখিয়েছেন তিনি। তবে গত পাঁচ বছরে মোস্তাফিজারের সম্পদ বেড়েছে ১০৬ শতাংশ। মোস্তাফিজারের নিজস্ব আয় না থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুজন। সুজন বলছে, মেয়র হিসেবে বেতন-ভাতা গ্রহণ করেছেন মোস্তাফিজার।

তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ২৫৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ৭১ শতাংশ প্রার্থী ৫ লাখ টাকার কম সম্পদের মালিক। অন্যদিকে কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক রয়েছেন তিনজন। আগের নির্বাচনের তুলনায় এবার স্বল্প আয়ের প্রার্থীর অংশগ্রহণ হ্রাস পেয়েছে বলে সুজনের বিশ্লেষণে এসেছে। প্রার্থীদের আয়কর বিবরণীর তথ্য প্রকাশ না করার বিষয়টিকে তথ্য গোপনের শামিল মনে করছে সুজন।

সুজন বলছে, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে কর–সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। ফলে কোন প্রার্থী কত টাকা কর দিচ্ছেন অথবা আদৌ দিচ্ছেন কি না, তা বিশ্লেষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিপত্র অনুযায়ী আয়কর সনদের কপি ও রশিদ মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিলের বিধান রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে আয়কর–সংক্রান্ত ঘরটি তুলে দেওয়া হয়েছে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের ২০১৭ ও ২০২২ উভয় নির্বাচনে ৬৩ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। এই ৬৩ জন প্রার্থীর ২০১৭ সালের হলফনামার সঙ্গে ২০২২ সালের হলফনামার আয়ের তথ্য তুলনা করে দেখা যায়, ৪২ জন প্রার্থীর আয় বেড়েছে, ৭ জনের আয়ের কোনো পরিবর্তন হয়নি, ১০ জনের আয় কমেছে। সম্পদ বেড়েছে ৩৭ জনের।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমানে ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে৷ এর মধ্যে ৩০২ ধারায় মামলা রয়েছে ৫ জনের বিরুদ্ধে। অতীতে মামলা ছিল ৩৫ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে।

নির্বাচনে ২৫৪ জন প্রার্থীর মধ্যে অর্ধেকের বেশি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস ও এর নিচে। এমন প্রার্থীর সংখ্যা ১৪৬ জন। এর মধ্যে ৯৩ জন এসএসসি পাস, ৫৩ জন মাধ্যমিকের গণ্ডি অতিক্রম করেননি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা ৭০।

সুজন রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বলেন, নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা ইশতেহারে তথাকথিত কিছু প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচনের পরে সেগুলো আর বাস্তবায়িত হয় না। ইশতেহারের বাস্তবায়ন নিয়েও বিশ্লেষণ হওয়া প্রয়োজন। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজনের কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ।

সোনালীনিউজ/আইএ