ঢাকা: ঢাকা ওয়াসার এক গাড়িতে পরিমাণ অনুযায়ী পানির মূল্য ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। তবে অনেক ক্ষেত্রেই পানির গাড়ি থেকে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি টাকা। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান জানিয়েছেন, কোনো গাড়ি থেকে অতিরিক্ত টাকা চাইলে বিষয়টি তাকে অবগত করার জন্য। সে ক্ষেত্রে ঐ কর্মচারিকে চাকরিচ্যুত করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (১৮ মার্চ) বেলা ১২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ ওয়াসা ভবনে আয়োজিত 'আসন্ন রমজানে পানি সরবরাহ নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে মত বিনিময়' সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তাকসিম এ খান বলেন, 'পানির গাড়ি বাড়তি টাকা চাইলে জানান, সে পরদিন থেকে ঢাকা ওয়াসায় থাকবে না।'
এক্ষেত্রে পানির গাড়িতে থাকা নাম্বারে অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে ওয়াসা।
এ সময় জানানো হয়, আদাবর এলাকায় পানির সমস্যা। এই এলাকা ঢাকা ওয়াসার ডিএমএ ৩০১। পানি সমস্যা সমাধানে এই এলাকায় দুইটা টিউবওয়েল করা হচ্ছে৷ টিউবওয়েল দুটি হয়ে এটা করতে পারলে পানির সমস্যা হবে না।
রাজনৈতিক কারণে অনেক কর্মচারী ওয়াসায় সুবিধা ভোগ করে, কেউ আবার অসুবিধায় ভোগে। এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেন, 'রাজনৈতিকভাবে কোনো কর্মচারীকে বিচার করা হয় না। ওয়াসা আইন অনুযায়ী চলে।'
অনুষ্ঠানে রাজধানী বাসীদের পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানান ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করব, পানি সরবরাহ আমরা স্বাভাবিক রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করব৷ রমজান মাসে আমাদের অনুরোধ পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হোন। পানি শুধু পয়সা দিয়ে কিনলেই হবে না, পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।'
তিনি বলেন, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানির চাহিদা বাড়ছে। আরও বাড়বে৷ সেটা ট্যাকেল করার মত সামর্থ্য আমাদের আছে। ঢাকায় পানির চাহিদা প্রচুর ওঠানামা করে।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, শীতকালে পানির চাহিদা থাকে ২০০ থেকে ২১০ কোটি লিটার। শীতে মানুষ পানি ব্যবহার করে কম। শুষ্ক মৌসুমে পানির চাহিদা ২৬০ থেকে ২৬৫ কোটি লিটার৷ বর্ষার মৌসুমে পানির চাহিদা কিছুটা কমে যায়। ওয়াসার সক্ষমতা ২৯৫ কোটি লিটার৷
ওয়াসার এমডি বলেন, ঢাকা ওয়াসা আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে ঢাকা শহরের পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার সামগ্রিক প্রস্তুতি গ্রহন করেছে। ঢাকা ওয়াসার সকল পানি শোধানাগার ও পানির পাম্পসমূহ নিরবচ্ছিন্নভাবে ২৪ ঘন্টা চালু থাকবে। বিদ্যুৎ বিভ্ৰাটকালীন (লোড-শেডিং/লো-ভোল্টেজ/হাই-ভোল্টেজ) সময়ে পানির পাম্পসমূহ Dual Source বিদ্যুৎ লাইন/ ফিক্সড জেনারেটর/মোবাইল জেনারেটর দ্বারা চালু রাখা হবে। সবগুলি জোনাল অফিস/এসওসি তে পর্যাপ্ত পানির গাড়ী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।'
তাকসিম এ খান বলেন, 'পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে জনসমাগম স্থান, যেমনঃ গুলিস্তান, ফার্মগেট, মহাখালী, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, সায়েদাবাদ বাসষ্ট্যান্ডসহ এরুপ সকল জোনের বিভিন্ন স্থানে ইফতার ও সেহরির সময় প্লাষ্টিক ট্যাংক/ট্রলি স্থাপন করে পানি সরবরাহ করা হবে। রাজধানীর মসজিদগুলিতে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে পানি সরবরাহের জন্য ঢাকা ওয়াসায় ৪৮টি পানির গাড়ি এবং ১৭ টি ট্রাক্টর প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷ লোডশেডিং এর সময় স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সোর্স হিসাবে ৩৮০ টি ফিক্সড জেনারেটর এবং ১৯টি মোবাইল জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে । অভিযোগ প্রাপ্তিসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ‘ওয়াসালিংক-১৬১৬২' এবং ১১টি অভিযোগ কেন্দ্ৰ ২৪ ঘন্টা খোলা রাখা হবে।'
তিনি বলেন, 'মড্স জোনের পানির পাম্প মনিটরিং করার জন্য বিদ্যমান ১০টি এ্যডভাইজরী ও মনিটরিং টিম তৎপর থাকবে। আশা করা যায় কোন সমস্যা দেখা দিবে না। তবে, রমজান মাসে পানি ব্যবহারের প্যাটার্ন কিছুটা বদলে যায়। এছাড়াও গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় উৎপাদন ক্ষেত্রবিশেষে কমে যেতে পারে। কোন কোন সময় গভীর নলকূপ/পাম্প মোটর রক্ষণাবেক্ষনের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের অন্যতম বড় উৎসব ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে রমজান মাসের আগে থেকেই ঢাকা শহরে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী ও অস্থায়ী দর্শনার্থীর উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় সাময়িকভাবে পানির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।
সোনালীনিউজ/এলআই/আইএ