জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের ৭০ হাজার তদন্ত প্রতিবেদন ঝুলে আছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ৯, ২০২৩, ০২:৪৩ পিএম

ঢাকা : জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের বিষয়ে চাওয়া তদন্ত প্রতিবেদন সুস্পষ্ট মতামতসহ যথাসময়ে দিতে মাঠ কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানিয়েছেন এনআইডি নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর (গ্রেড-১)।

এনআইডির তথ্য বলছে, সারা দেশের মাঠ কর্মকর্তাদের কাছে এনআইডি সংশোধনের প্রায় ৭০ হাজারের বেশি তদন্ত প্রতিবেদন ঝুলে আছে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায় এনআইডি মহাপরিচালক জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধনী আবেদনের তদন্ত প্রতিবেদন যথাসময়ে দিতে অনুরোধ জানান।

গত ৩০ এপ্রিল মাসিক সমন্বয় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম।

কর্মকর্তারা জানান, এনআইডির কর্মকর্তা বা সক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি সংশোধনের আবেদন পড়ছে প্রতিদিন। পাশাপাশি প্রধান কার্যালয় ও মাঠ কর্মকর্তাদের এখতিয়াভুক্ত আবেদনগুলো তারা যথাসময়ে সমাধান করছেন না। যার ফলে সংশোধনের আবেদন নিষ্পন্ন হচ্ছে না। জটিল থেকে জটিলতর আবেদনগুলো এনআইডি মহাপরিচালক (অপারেশন্স) ও পরিচালক সমাধান করে থাকেন। তারা প্রতিনিয়তই জটিল আবেদনগুলো নিষ্পন্ন করতে আবেদনকারীর ব্যক্তিগত শুনানি করছে। তবে তদন্ত চাওয়া আবেদনগুলোর প্রতিবেদন না আসায় প্রায় ৭০ হাজারের বেশি আবেদন নিষ্পন্ন করা যাচ্ছে না। এনআইডি মহাপরিচালক ও পরিচালকের বাইরেও কিছু জটিল আবেদন কমিশনের কাছে যায়। কমিশনের মাধ্যমে সেগুলো সমাধান হয়ে থাকে।

এনআইডি মহাপরিচালক সমন্বয় সভায় জানান, নির্বাচনী তফশিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার তালিকা যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। এনআইডি সেবা কার্যক্রম নির্বাচন চলাকালীন চালু রাখা বা না রাখার বিষয়েও সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন। এনআইডি সেবা গতিশীল করার লক্ষ্যে তদন্ত প্রতিবেদন যথাসময়ে এবং সুস্পষ্ট মতামতসহ দেওয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেন তিনি।

এছাড়া, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কেপিআইভুক্ত হওয়ায় এ ভবনে গ্যাসচালিত যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন বলে নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করে দেন মহাপরিচালক।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ কার্যপত্র মোতাবেক আলোচ্য বিষয়সমূহ ধারাবাহিকভাবে সভায় উপস্থাপন করেন। গত সভার কার্যবিবরণীতে কোনরূপ সংশোধনী না থাকায় তা সর্বসম্মতিক্রমে দৃঢ়করণ করা হয়। সভায় বিভিন্ন শাখা ও দপ্তরসমূহের নিষ্পন্ন ও অনিষ্পন্ন কাজের বিবরণীসহ গত সমন্বয় সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

ইসির যুগ্মসচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের কর্মচারী নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যা আগামী জুনের মধ্যে শেষ করা হবে।

উপপ্রধান মুহাম্মদ মোস্তফা হাসান জানান, মাঠ পর্যায়ের সার্ভার স্টেশনগুলো সম্প্রসারণের বিষয়ে কারিগরি টিম গঠন ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সিস্টেম ম্যানেজার (আইসিটি) রফিকুল হক জানান, মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়ের ভিপিএন সংযোগ এবং মডেমের সেবা যথাযথ রাখার জন্য মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার মো. ইকবাল জাবেদকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বিটিসিএল এর সঙ্গে চুক্তি বহির্ভূত ১২টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলা সার্ভার স্টেশনসমূহকে ভিপিএন সংযোগের আওতায় নেওয়ার উপযোগী রয়েছে।

কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল হোসেন জানান, বৈদ্যুতিক লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় ভিপিএন বা মডেম সচল রাখার স্বার্থে ইউপিএস অথবা জেনারেটর চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, নষ্ট ট্যাব এবং ইভিএমগুলোর ব্যাটারির কারণে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই, নষ্ট ট্যাব এবং ইভিএমসমূহ যথাযথ সংরক্ষণ, মেরামত বা বিনষ্টকরণের বিষয়ে কমিশনের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন।

নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-১ শাখার যুগ্মসচিব মো. আবদুল বাতেন জানান, ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও নিয়োগ প্রক্রিয়া ডাটাবেজের আওতাভুক্ত করার লক্ষ্যে একটি সফটওয়্যার প্রস্তুত করার বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন।

নির্বাচন পরিচালনা-১ শাখার উপসচিব জানান, নির্বাচনী সামগ্রী ক্রয় প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা যাবে। সব কার্যক্রম ইজিপির মাধ্যমে শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আইডিইএ প্রকল্প (২য় পর্যায়) প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েম জানান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করাসহ নিজস্ব জনবলকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা প্রয়োজন। ভবনের বেজমেন্টে যাতে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত লোকজন প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।

সভার সভাপতি ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, অফিস পরিদর্শন ম্যানুয়েল অনুযায়ী নির্ধারিত সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিদর্শন প্রতিবেদন এন্ট্রি এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার মনিটরিং জোরদার করতে হবে।

তাছাড়া, বিনষ্টযোগ্য যন্ত্রপাতি ও মালামাল বিনষ্ট করণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ডিজিটাল হাজিরা চালু করা প্রয়োজন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনকে আঞ্চলিক, সিনিয়র জেলা ও উপজেলা কার্যালয় হতে পত্র দেওয়া যেতে পারে এবং অনিষ্পন্ন কাজসমূহ যথাযথভাবে নিষ্পন্ন করতে হবে।

এছাড়া, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজ করতে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার, চলাফেরা ও কথাবার্তায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই