ঢাকা: কোরবানিকে সামনে রেখে অনলাইনে পশু বেচাকেনা শুরু হলেও হাটকেন্দ্রিক ব্যবসা এখনো জমেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শহরকেন্দ্রিক কোরবানির পশুর কেনাকাটা জমে ওঠে ঈদের ঠিক আগে আগে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) বলছে, নির্বাচনের বছর হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পশু বিক্রি কিছুটা বাড়ার কথা। এদিকে অর্থনীতিতে একটা চাপও আছে। মানুষ খরচ কমাতেও পারে। তাতে শেষ মুহূর্তে পশুর ব্যবসা ঘিরে একটা শঙ্কা আছে।
বেচাকেনা কেমন হবে, তার জন্য ব্যবসায়ীদের ঈদের আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, কোরবানির পশুর বেচাকেনা ঈদের আগে আগেই বেশি হয়। আর পশুর দাম ৫ শতাংশের মতো বেড়েছে। এর ওপরে আর বাড়বে না বলে ধারণা বিডিএফএর।
[201742]
এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ বছর কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি। এ বছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। সেই হিসাবে এ বছর কোরবানির পরেও দেশে ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু থেকে যাবে।
বিডিএফএ বলছে, গতবার লাইভ ওয়েট বা জীবন্ত পশু ওজনের মাধ্যমে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি ৪৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৭৫ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছিল। এবার তা শুরু হয়েছে প্রতি কেজি ৪৮০ টাকা দিয়ে। মোটাতাজা গরু লাইভ ওয়েটে প্রতি কেজি ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এখন অনলাইনের পাশাপাশি সরাসরি হাট থেকেও লাইভ ওয়েটের মাধ্যমে গরু কেনা যায়।
এদিকে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর গোখাদ্যের দাম ৩০ শতাংশের মতো বেড়েছে। ভুসি-খৈল দিয়ে প্রস্তুত করা গোখাদ্য প্রতি কেজি ৩২-৩৫ টাকা থেকে ৫০ টাকার আশপাশে। পানি-বিদ্যুৎ বাবদ খরচও বেড়েছে। তাতে বাজারে গরুর দাম ৫ শতাংশের মতো বেড়েছে। খাসি বা অন্যান্য পশুর ক্ষেত্রে দাম আরেকটু বেশি বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন পর্যন্ত মাঝারি মানের গরু ও খাসির চাহিদা বেশি জানাচ্ছেন ক্রেতারা।
[201669]
এবার যে সংখ্যক পশু মজুত আছে, তার মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু। ঢাকা বিভাগে ৮ লাখ ৯৫ হাজার, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫৩ হাজার, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ লাখ ১১ হাজার, খুলনা বিভাগে ১৫ লাখ ১১ হাজার, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৯৩ হাজার, সিলেট বিভাগে ৪ লাখ ১০ হাজার, রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ লাখ ৯৮ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে।
অনলাইনে বেচাকেনা বেড়েছে
প্রচলিত হাটের বাইরে এখন অনলাইনকেন্দ্রিক গবাদিপশুর বাজারও বেশ জমে ওঠে। মূলত করোনার সময় থেকে অনলাইনের বাজার বড় হতে শুরু করেছে। এবারও অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ভালো বেচাকেনা করছেন। তবে অনলাইনকেন্দ্রিক বেচাকেনার বড় অংশ শহরকেন্দ্রিক। গ্রামের কোরবানিদাতারা এখনো প্রথাগত গরুর হাটের ওপরেই নির্ভর করেন।
বিডিএফএ বলছে, শহরকেন্দ্রিক বা শহরতলিতে যেসব পশুর খামার আছে, সেসব খামারের ৬০ শতাংশের মতো পশু ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে, নয়তো বিক্রির জন্য ঠিক হয়ে আছে। তবে এবার অনলাইনে গরুর তুলনায় খাসির বেচাকেনা বেশি হচ্ছে। গরু অনলাইন থেকে কেনার চেয়ে হাটে এসে কিনতেই ক্রেতারা বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট’ নামের কোরবানির পশুর এই ১০ হাটে একটি ডিজিটাল বুথ থাকবে। সেখানে এটিএম থেকে টাকা ওঠানো যাবে। পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) যন্ত্র ও মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (এমএফএস) মাধ্যমে ক্রেতারা পশু বিক্রির টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের টাকা বহনের ঝামেলা কমবে।
সোনালীনিউজ/এআর