‘বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব বদলেছে দিল্লিতে’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৩, ০৭:৩৭ পিএম

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল নয়াদিল্লি হয়ে আসায়, সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের মনোভাবের পরিবর্তন ঘটেছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক সময়ের বিশেষ দূত ওয়ালিউর রহমান। 

সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার নেতৃত্বে ওই প্রতিনিধি দল ‘খুশি মনেই’ ঢাকা ছেড়েছেন। 

“তারা বলেছে যে, ‘বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ, আমরা তার সঙ্গে কাজ করব। শেখ হাসিনা এমন একজন নেতা, ‍যিনি এই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিয়েছেন’। সবক্ষেত্রে তারা সম্মান দেখিয়েছে। কেবল সম্মান দেখায়নি, বাংলাদেশ যা করেছে তার প্রশংসা করেছে,” বলেন ওয়ালিউর রহমান। 

রোববার ‘ইনসাইড আউট’ এ যোগ দিয়ে পশ্চিমা কূটনীতির বিশ্লেষণের পাশাপাশি ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ভারসাম্য এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের পর বিএনপি ও তার জোটের শরিকরা ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জনের ডাক দিলে ২০১৩ সালে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ যেভাবে দূতিয়ালি ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের কথা বলছিল, এবারও দেখা যাচ্ছে নানামুখী তৎপরতা। 

এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সফরে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশ সফর করে গেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি দল। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে ভিসা নীতি, যা রাজনীতিতে তোলপাড় তুলেছে।

এর মধ্যে আজরা জেয়ার এই সফরের কী প্রভাব আগামী নির্বাচনে পড়বে তা নিয়েও নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দাঁড় করাচ্ছেন অনেকে। ওয়ালিউর মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে রওয়ানা হওয়ার পর এই প্রতিনিধি দলের মনোভাবে পরিবর্তন ঘটেছে ভারতে।

তিনি বলেন, “একটা বিষয় মনে রাখুন, তারা বাংলাদেশে আসার আগে খুবই উচ্চকণ্ঠ ছিল, ওয়াশিংটন ডিসি, লন্ডন, ব্রাসেলস থেকে ফাঁস হয়েছে যে, তারা এখানে আসছে, কী জানি ঘটে।”

“আমেরিকান দল এল নয়াদিল্লি হয়ে। নয়াদিল্লি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল আমেরিকানদের বাংলাদেশ সফরে পুরো কার্যক্রমে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেন।

“তারা (ভারত) আমেরিকান বন্ধুদের বলেছেন, ‘দেখুন বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু, আমাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু, এই এলাকায় আমাদের একমাত্র বন্ধু, আমাদের শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান রয়েছে। তবে বাংলাদেশ এমন দেশ, যারা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিকসহ সম্ভাব্য সবক্ষেত্রে, বর্তমানে কৌশলগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। ‘সুতরাং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সতর্ক হোন’, এই বার্তাটা নয়াদিল্লি দিয়েছে।” 

ওয়ালিউর রহমান বলেন, “তারা (যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল) যখন বাংলাদেশে এসেছে, তখন দেখেছেন তাদের ভূমিকা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম।” 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আজরা জেয়ার সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, “সেটার ভাষা খেয়াল করুন। এটা ছিল চমৎকার কূটনৈতিক ভাষায়, আমি এমনটা ভাবিনি।” 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা শক্তির তেমন কোনো প্রভাব দেখেন না জানিয়ে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনীতিকদের বক্তব্য ভিয়েনা কনভেনশনের বিরোধী। 

পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা ওয়ালিউর ১৯৭১ সালে সুইজারল্যান্ডের পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তান সরকারের চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন তিনি, সুইস সরকারের রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করে সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। 

পেশাদার এই কূটনীতিক জার্কাতা, জেনেভা, রোম, জেদ্দা, তিউনিশিয়া ও নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে কর্মরত ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ওয়ালিউর ১৯৯৭-১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। 

আজরা জেয়া যেদিন বাংলাদেশে, সেদিনই ১২ জুলাই সরকার পতনের দাবিতে ‘এক দফা’ আন্দোলন ঘোষণা করেছে বিএনপি। তাদের সমাবেশস্থল নয়াপল্টন থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বড় ধরনের সমাবেশ করে আওয়ামী লীগও। তারাও ঘোষণা করে ‘এক দফা’। সেটি হলো শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়।

একই দিন দুই বড় দলের বড় ধরনের জমায়েত নিয়ে অতীতে রাজনীতিতে সংঘর্ষ, সংঘাত ঘটলেও এবারের পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ।

ওয়ালিউর বলেন, “এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে, একটি (সংঘাতের) ঘটনাও ঘটেনি। এটা আমাদের আমেরিকান বন্ধুদের বেশিমাত্রায় অভিভূত করেছে।

“তারা (আমেরিকান) মনে করেছিল, নাটকীয় কিছু হয়ে যাবে (একই দিন দুই দলের সমাবেশ)। কিন্তু তেমন কিছু দেখেনি। তারা খুবই অবাক হয়েছিল। তাদের সঙ্গে যাদের কথা হয়েছে, তারা আমাকে বলেছে যে, নাটকীয় কোনো কিছু না ঘটায় তারা অবাক হয়েছে।”

সোনালীনিউজ/এআর