‘অনুমতি ছাড়া এডিসি সানজিদা এমন বক্তব্য দিতে পারেন না’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩, ০১:০৩ পিএম
এডিসি হারুন ও এডিসি সানজিদা

ঢাকা : ছাত্রলীগ নেতাদের এডিসি হারুন অর রশিদের মারধরের ঘটনায় মুখ খুলেছেন এডিসি সানজিদা। কিন্তু অনুমতি ছাড়া ডিএমপির ক্রাইম বিভাগের এডিসি সানজিদা আফরিনের এভাবে বক্তব্য দেওয়া ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) এডিসি হারুন অর রশিদের ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধরের ঘটনার বিষয়ে এডিসি সানজিদা আফরিন গণমাধ্যমকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন।

তিনি দাবি করেন, তার স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুনই প্রথমে এডিসি হারুনের গায়ে হাত তুলেন। মামুন সবার সামনে সানজিদাকেও চড় দেন বলে তিনি জানান।

[206838]

এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে আমাদের এডিসি হারুন অর রশিদ ও পরিদর্শক মো. গোলাম মোস্তফা বাড়াবাড়ি করেছেন।

এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রসঙ্গ ঢাকার পুলিশ প্রধান বলেন, আইনের ব্যত্যয় ঘটায় এরইমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। তারপর আমি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তদন্ত কমিটি শিগগিরই প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমাদের অফিসারদের কার কতটুকু দোষ সেই অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ পুলিশ সদরদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুপারিশ পাঠাব।

গত শনিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে এডিসি হারুনের বক্তব্যের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। হারুনের তথ্যের বিষয়ে হারুনই জানে।

[206822]

এডিসি সানজিদার বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, সানজিদার সঙ্গে আমি কথা বলিনি। সানজিদার বক্তব্য দি‌য়ে ঠিক করেনি। কারণ অনুমতি ছাড়া তিনি এভাবে বক্তব্য দিতে পারেন না।

অন্যদিকে, ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ বলেছেন, সানজিদার স্বামীই প্রথমে হারুনকে মেরেছে। এ বিষয়েও তদন্ত হওয়া উচিত। এই প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার বলেন, হারুন এমন তথ্য কোথায় পেলেন আমি জানি না।

‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। হারুনের তথ্যের বিষয়ে হারুনই জানে’-যোগ করেন তিনি।

ঘটনার পর ডিএমপি সদর দপ্তরে কর্মরত এডিসি সানজিদা অন্তরালেও থাকলেও মঙ্গলবার মুখ খুলেছেন গণমাধ্যমে। এডিসি সানজিদা বলেন, ‘কিছুদিন ধরেই আমার কার্ডিয়াক সমস্যা হচ্ছিল। ২০১৯ সাল থেকেই আমি হাইপার টেনশনের ওষুধ খাচ্ছিলাম। গত ৪-৫ মাস ধরে সমস্যাটা বেড়ে যায়। দু-তিন সপ্তাহ ধরে বুকে ব্যথা বেড়ে যাচ্ছিল। শনিবার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে যাই।

এডিসি হারুন স্যারকে বিষয়টা জানালে তিনি ওসির মাধ্যমে একটি সিরিয়াল ম্যানেজ করে দেন। সন্ধ্যা ৬টার পর সিরিয়াল পাই। একটু পর স্যার (এডিসি হারুন) আসেন। আমি ওই সময় ইটিটি করাচ্ছিলাম। ইটিটির শেষ পর্যায়ে আমি রুমের বাইরে হট্টগোল চিৎকার-চ্যাঁচামেচির শব্দ শুনতে পাই। প্রথমে স্যারের শব্দ শুনতে পাই। তিনি বলছিলেন, আপনি আমার গায়ে হাত তুলছেন কেন? কিছুক্ষণ পর আমি বাইরে বের হয়ে দেখি, আমার হ্যাজবেন্ড অস্বাভাবিক অবস্থায় এবং তার সঙ্গে কয়েকজন ছেলে মিলে স্যারকে (এডিসি হারুনকে) মারতে মারতে একটা রুমের ভেতরে নিয়ে যায়। তখন আমাকে চড়-থাপ্পড় দেয় আমার হ্যাজবেন্ড। এ সময় আমার স্বামী খুবই উত্তেজিত অবস্থায় ছিলেন। তিনি তখন সেখানে কেন গিয়েছিলেন তা আমি জানি না।’

সানজিদা আরও বলেন, ‘তারা স্যারকে মারতে মারতে টেনে-হিঁচড়ে রুমের ভেতর নিয়ে আসেন। তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য স্যার ইটিটি রুমের ভেতর এক কোণায় গিয়ে দাঁড়ান। এ সময় আমার স্বামী দুজন ছেলেকে ঘটনাস্থলের ভিডিও করতে বলেন। আমি তখন ইটিটি ড্রেসে ছিলাম। আমি চিৎকার করে আমার স্বামীকে বলছিলাম, এ রুমে কোনো ছেলে মানুষ ঢোকার কথা নয়। আপনি এত লোক কেন ঢুকিয়েছেন?

ভিডিও করতে বলছেন কেন? এ সময় আমার স্বামী আমাকে থাপ্পড় মারেন। তখন আমার গাড়িচালক ঘটনাস্থলে এসে আমার এবং স্বামীর মাঝখানে দাঁড়ান। ড্রাইভারের গায়ের ওপর দিয়ে এসে আমাকে মারধর করা হয়। দু-তিনজন ছেলে যখন ভিডিও করছিলেন তখন একজনের কাছ থেকে আমি ফোনটা নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। ওই ছেলের সঙ্গেও আমার হাতাহাতি অবস্থা হয়। তাদের উদ্দেশ্যে ছিল আমাকে এবং স্যারকে (এডিসি হারুন) একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে ভিডিও করা। অসৎ লক্ষ্যেই এটা করানোর চেষ্টা হচ্ছিল। স্যারকে মারার সময় তারা আমাকেও মারধর করেছে। আমার বডিগার্ডকেও মারধর করেছে। একপর্যায়ে তারা স্যারকে রুম থেকে বের হতে বলছিলেন। তখন স্যার বলছিলেন, আমি এখান থেকে বের হলে তো আমাকে মেরে ফেলবেন। আমি থানার ফোর্সদের আসতে বলেছি। তারা এলে আমি এখান থেকে বের হব। পরে থানা থেকে ফোর্স আসে। এরপর সবাই নিচে নেমে যায়।’

এমটিআই