বিশ্ব খাদ্য দিবস

দেশে খাদ্য দ্রব্যের দামে অতিষ্ঠ মানুষ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৩, ০৪:০১ পিএম

ঢাকা: দেশের বাজারে ক্রমেই বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম। বর্তমানে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ যা শিগগির কমার কোনো লক্ষণও নেই। বাধ্য হয়ে সংসারে খাবারের যোগান দিতে ব্যয় কমিয়ে এনেছে দেশের গরিব ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষরা। খাদ্যতালিকা ছোট করেছে অনেকে এবং কম খাচ্ছে তারা।

এমন পেক্ষাপটে আজ সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব খাদ্য দিবস। কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার উদ্যোগে বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচিতে পালিত হয়েছে দিবসটি। এবারের প্রতিপাদ্য ‘পানি জীবন, পানিই খাদ্য-কেউ থাকবে না পিছিয়ে।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশে উঠেছিল।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) জরিপের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে বাজারে দিনের পর দিন জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকায় খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলেছে নিম্নআয়ের মানুষ। তারা কম খাচ্ছে। ছয় মাসে (সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত) ৯৬ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার মাংস খাওয়া কমিয়েছে। ৮৮ দশমিক ২২ শতাংশ পরিবার মাছ কম খাচ্ছে।

[208938]

সানেরমের তথ্য মতে, নিম্নআয়ের পরিবারে খরচ বেড়েছে গড়ে ১৩ শতাংশ। এ সময় তাদের আয় বাড়েনি। বাধ্য হয়ে অনেক পরিবার খাবারের গুণগত মানেও ছাড় দিচ্ছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে কম দামের খাবার কিনে খাচ্ছে। সারাদিন না খেয়ে থাকছে, এমন দরিদ্র মানুষের হার ১৮ শতাংশ। দেশের আট বিভাগের নিম্নআয়ের এক হাজার ৬০০ পরিবারের ওপর জরিপ করেছিল সানেম। পরে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাছ-মাংস ছাড়াও অন্যান্য খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রেও লাগাম টেনেছে দরিদ্র মানুষ। এর মধ্যে ৭৭ শতাংশ পরিবার ডিম ও ৮১ দশমিক ৪৩ শতাংশ পরিবার ভোজ্যতেল খাওয়া কমিয়েছে। প্রায় ৪৬ শতাংশ পরিবার ডাল, ৫৭ শতাংশ পরিবার আটা ও ৩৭ শতাংশ পরিবার ভাত কম খাচ্ছে।

তবে খাদ্য ঘাটতি নেই দাবি করছে সরকার।খাদ্যের মূল্যস্ফীতি যখন অসহনীয়, তখন বরাবরের মতো খাদ্য উৎপাদনে বিস্ময়কর সাফল্যের দাবি করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। রোববারও (১৫ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘বিগত ১৫ বছরে খাদ্য উৎপাদনে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জিত হয়েছে।’

সরকারের তথ্য মতে, দেশের প্রধান খাদ্য শস্যের মধ্যে চালের উৎপাদন ক্রমাগত বেড়ে ২০০৮-০৯ সালের ৩ কোটি ১৩ লাখ টন এখন (২০২২-২৩) সালে ৪ কোটি টনেরও বেশি হয়েছে। এছাড়া ২০০৮-০৯ সালে গমের উৎপাদন ছিল ৮ লাখ ৪৯ হাজার টন ২০২২-২৩ সালে ১১ লাখ ৭০ হাজার টন হয়েছে। পাশাপাশি ওই সময় ভুট্টা ছিল ৭ লাখ টন যা এখন ৬৪ লাখ টন উৎপাদন হচ্ছে। একই সময়ে আলু ৫ লাখ টন থেকে বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ, সবজি ৩০ লাখ টন থেকে বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ টন।

জানা যায়, খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর এখন উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে জানায় কৃষি মন্ত্রণালয়। ২০০৮-০৯ সালে যেখানে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৬ হাজার টন, সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে। 

এছাড়া অন্যান্য ফসলের উৎপাদনেও ধারাবাহিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে প্রায় ৯ গুণ, আলু ২ গুণ, ডাল ৪ গুণ, তেল বীজ ২.৫ গুণ ও সবজি ৮ গুণ। বর্তমানে বাংলাদেশের ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে, যেমন, ধান উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয়, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, চা উৎপাদনে চতুর্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে সপ্তম।

[208940]

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) দেশে ৬ হাজার ৯৫০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ মূল্যের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৬ শতাংশ কম। ওই অর্থবছরে (২০২১-২২) আমদানির পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। তবে আমদানির জন্য গুণতে হয় চড়া খরচ। ফলে গত এক দশকে খাদ্য আমদানি ব্যয় আগের তুলনায় আড়াই গুণ বেড়ে ৮০ হাজার ৮০০ কোটি ডলার হয়েছে।

সংকট থেকে উত্থরণে যা বলছেন বিশ্লেষকরা: খাদ্য মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক শুধু বাংলাদেশেই না।বিশ্বের বেশকিছু দেশ এ সমস্যার মধ্যে রয়েছে। তবে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা বা আর্জেন্টিনার মতো এখনও গভীর সংকটে থাকা কিছু দেশ ছাড়া অন্যরা মূল্যস্ফীতি কমাতে পারছে। যদিও দেশে শিগগির খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। 

এদিকে আমদানি নির্ভরতা বাড়ার পরেও ডলার সংকটে পণ্য আমদানি কমেছে গত অর্থবছর। তাতে স্বাভাবিকভাবে যতটুকু সংকট তৈরি হয়েছে, এর চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে পণ্য মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা। আমদানি কমার সংকটকে কাজে লাগিয়ে অনৈতিকভাবে পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রবণতা রয়েছে ব্যবসায়ীদের। এছাড়া আছে সিন্ডিকেটের প্রভাব।

এমএস