ঢাকা : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর।
নির্বাচন কমিশন এই তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিলো এমন সময়ে যখন নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সরকার ও বিরোধীদলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ চরম অবস্থায় রয়েছে। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে পঞ্চম দফার মতো অবরোধ পালন করছে বিএনপি ও তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশ্য দেয়া এক ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, কমিশনের দায়িত্ব নেবার পর থেকে তারা বিভিন্ন পক্ষের সাথে একাধিকবার আলোচনা করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোকেও একাধিকবার আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এর মধ্যেই বাংলাদেশের বড় তিনটি দলকে চিঠি দিয়ে ‘পূর্বশর্ত ছাড়া’ সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এর আগে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাধা দানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার দেয়ার মতো ঘোষণাও দিয়েছে।তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক মহল থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানানো হলেও সেরকম সম্ভাবনা খুব কম।
[211256]
তবে বিএনপিসহ অন্যান্য দল বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি করলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে- তাদের অধীনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে কিংবা মনোনয়ন বিক্রি শুরুর পর থেকে নির্বাচনকালীন সরকার দায়িত্ব পালন ও রুটিন কাজ করবে বলে সরকার পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছিলো কিছু দিন থেকেই।
নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হলেও সেই রোডম্যাপে নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো রূপরেখা উল্লেখ করা হয়নি। জানা গেছে, নির্বাচনী সরকারের মন্ত্রিসভা ছোটো করার পরিকল্পনা নেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তবে তারা শুধু রুটিন ওয়ার্ক ও দৈনন্দিন কাজ করবেন, যাতে সরকার সচল থাকে। এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচার শুরু হলে মন্ত্রীরা আর সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।
এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও নির্বাচন হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে। এর মধ্যে একবার নির্বাচনি সরকারের মন্ত্রিসভা ছোট করা হয়েছিল, দেখা গিয়েছিল নতুন মুখও। এবারও কি নির্বাচনি সরকারে কোনো পরিবর্তন আসছে? প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, সে সুযোগ কম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আকার ছোট করলে দেখা যায়, অনেক মন্ত্রণালয়ের কাজ হয় না। কাজগুলো বাধাগ্রস্ত হয়ে যায়। ১৪-তে আমি কিছু মন্ত্রী অন্যান্য দল থেকে নিয়োগ করেছিলাম, এরপর ১৮-তে সেই পদ্ধতি করি নাই, যেটা অন্যান্য দেশে হয়-এইবারও সেভাবে হবে। নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে আমাদের রুটিন ওয়ার্ক দায়িত্ব পালন, দৈনন্দিন কাজকর্ম করব, যাতে সরকার অচল হয়ে না যায়, সেটা আমরা করব, সেভাবে চলবে।
তফসিল অনুযায়ী, ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ। এরপর নির্বাচনের প্রচারে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা, সরকারি কোন সুযোগ পাবেন না এবং গাড়িতে পতাকা ব্যবহার করতে পারবেন না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আরপিও অনুযায়ী, যখন মনোনয়নপত্র দাখিল হবে, তখন থেকে আর সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা মন্ত্রীরা ব্যবহার করতে পারবে না, পতাকা বা কোনো সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে না। তখন একজন প্রার্থী হিসেবেই তাদেরকে ভোট চাইতে হবে।
২০১৮ সালের মতো এবারও নিজের জন্য আলাদা কার্যালয়ের কথা জানান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি নিজেও যখন প্রার্থী হব, তখন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্স করব না। আমি আমার অফিস আলাদা, যেমন গতবারও করেছিলাম ৫ নম্বরে, এবার আলাদা একটা অফিসের ব্যবস্থা করেছি।
তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এমটিআই