উপসচিব ও প্রোগ্রাম অফিসার সেজে ফাঁদ

এমপিওভুক্তির নামে ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪, ০৫:১০ পিএম

ঢাকা: অনিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আওতায় আনার আশ্বাসে চার কোটির বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা মেট্রো-উত্তর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান পিবিআইয়ের বিশেষ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

অভিযুক্তরা হলেন জুবায়ের ওরফে মো. আসাদুজ্জামান মানিক ওরফে লুৎফর রহমান (৪৭) এবং আব্দুল গফফার ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে সাইফুল (৭৭)। দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম অফিসার ও উপসচিব পরিচয়ে তারা এই প্রতারণা করে আসছিলেন।

পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা দুজন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছি। মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অফিসার পরিচয় দিয়ে ছদ্মনামে তারা প্রতারণা করে বেড়াতেন। তাদের একজনের নাম আসাদুজ্জামান মানিক। তিনি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার ফলগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। আরেকজন আব্দুল গফফার। তিনি রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে অবসরে যান।’

[217769]

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সালে আসাদুজ্জামান মানিকের সঙ্গে পরিচয় হয় আব্দুল গফফারের। পরিচয়ের সূত্র ধরে তারা প্রতারণার ছক আঁকেন। এরপর বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে আব্দুল গফফার সুট টাই পরে ভুয়া উপসচিব সেজে ঘুরে বেড়ান। আর আসাদুজ্জামান মানিক প্রোগ্রাম অফিসার সাজেন। এরা বিভিন্ন মাদ্রাসা এবং শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখেন যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি পেন্ডিং আছে, লাইব্রেরিয়ান বা বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া দরকার সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষদের নম্বর জোগাড় করে ফোন দেন।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘তারা অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগের চেষ্টা করে ভোলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ স্থাপন করতে সফল হন। পরে তারা ঢাকায় চলে আসেন এবং তাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য সচিবালয়ের অপরদিকে অবস্থান নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষদের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর ১২ লাখ টাকা দাবি করেন। এই টাকা দিলে তারা তাদের কাজ করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রতারিত ব্যক্তিরা ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা তাদেরকে দেন। পরে বিভিন্নভাবে বিকাশ-নগদের মাধ্যমে বাকি টাকা নেওয়া হয়। টাকা দেওয়ার পরেও যখন কাজ হচ্ছিল না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানেরা খোঁজখবর নেন। তারপর অধিদপ্তরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন এই নামে কেউ নেই।’

এ বিষয়ে পিবিআই প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পায়। পরে ভুক্তভোগীরা মামলা দায়ের করলে সেই মামলার সূত্র ধরে একজনকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে এবং উপসচিব পরিচয়ধারী আরেকজনকে উত্তরার একটি ভাড়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘এই দুই প্রতারক ২০১৯ সাল থেকে প্রতারণার কাজটি করে যাচ্ছিলেন। আমরা তাদের এখন পর্যন্ত বিকাশ বা নগদের লেনদেনের যে তথ্য সংগ্রহ করেছি তাতে মোট ৪ কোটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৭২ টাকা লেনদেন করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের মাধ্যমে প্রতারিত অনেক ভুক্তভোগী আমাদের কাছ আসছে। আমরা তাদের কাছ থেকে তথ্য প্রমাণ জোগাড় করে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করব। বর্তমানে আমরা তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে এসেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে।’

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসামিরা বরগুনার পূর্ব হাজার বটতলা সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা, নাটোরের বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে ৮৫ হাজার টাকা, ভোলার উত্তর চরমানিকা লতিফীয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, জয়পুরহাটের মোহাব্বতপুর আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ আরও অন্যান্য মাদ্রাসার শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি বাতিল করার ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশ ও নগদ নম্বরে সর্বমোট ৪ কোটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৭২ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।’

এমএস