ট্যানারি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২২৭৭৬ টাকা করার প্রস্তাব 

  • নিজস্ব প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৪, ১০:০২ পিএম

ঢাকা: বর্তমানে দেশের ট্যানারি শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। এটি ৬৮ শতাংশ বাড়িয়ে ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা করার সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। 

একই সঙ্গে মজুরি দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রেডিং সিস্টেম যথাযথ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় শ্রমিকরা যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে টিকে থাকতে পারে সে জন্য এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। 

সিপিডির ধানমন্ডি কার্যালয়ে শনিবার (৪ মে) এ সংক্রান্ত এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। 

[222667]

গবেষণার বিষয় ছিল, ‘ট্যানারি শিল্পে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ।’ সিপিডির গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র গবেষক তামিম আহমেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা ও ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ, ভাইস-চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান, ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মালেক, অশি ফাউন্ডেশনের ভাইস-চেয়ারম্যান এসএম মোরশেদ প্রমুখ। 

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, শ্রমিকদের খাদ্যমূল্য ২০ হাজার ৫৬৪ টাকা। খাদ্যের বাইরে অন্যান্য খরচ ১২ হাজার ৮৮১ টাকা। ফলে মোট খরচ দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৪৪৫ টাকা। প্রত্যেক শ্রমিক পরিবারের গড়ে সদস্য সংখ্যা ৪ দশমিক ৬ জন। এর মধ্যে উপার্জনক্ষম সদস্য ১ দশমিক ৫ জন। সেই হিসাবে একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি হওয়া উচিত ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা। একই সঙ্গে আমাদের প্রস্তাব থাকবে গ্রেডিং সিস্টেম ঠিক করে একটি গ্রেডে আনা। এই খাতে গ্রেড উন্নয়নের সুযোগ কম। কারণ একেকটি গ্রেডের কাজ একেকরকম। যেহেতু পদোন্নতির সুযোগ নেই। তাই গ্রেডের মধ্যে কয়েকটি ভাগ যেমন-গ্রেড-৫ এর এ, বি ও সি করে সাব গ্রেড করা জরুরি। এর ফলে পদোন্নতির সুযোগ থাকবে ও শ্রমিকদের কাজে উৎসাহ বাড়বে। অ্যাংকর মেথডে (গবেষণার আন্তর্জাতিক স্বীকৃত একটি পদ্ধতি) ৩৫টি ট্যানারির ওপর গবেষণা পরিচালনা করেছে সিপিডি। 

[222649]

সংস্থাটির প্রস্তাবনায় এ শিল্পের শ্রমিকদের জন্য মোট পাঁচটি গ্রেডে মজুরি প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে পঞ্চম গ্রেডের জন্য ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা এবং প্রথম গ্রেডের জন্য ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করা হয় ৩৯ হাজার ২৭০ টাকা। 

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালে এসেও ৬০ শতাংশ কারখানা ওই বেতন দিচ্ছে না। প্রতিবছর শ্রমিকদের ৫ শতাংশ বেতন বাড়ানোর কথা থাকলেও সেটা বিবেচনায় বাস্তবায়ন হার অনেক কম পাওয়া গেছে। 

ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০২৩ সালে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে ট্যানারি শিল্প থেকে এসেছে ১২৩ মিলিয়ন ডলার। গার্মেন্টসের বাইরে বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি পণ্য খুঁজছে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে চামড়াজাত পণ্য গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত হতে যাচ্ছে। 

তিনি বলেন, ট্যানারি শিল্পে শ্রমিকদের দাবি ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা। আর মালিক পক্ষ দিতে চান ১৫-১৬ হাজার। কিন্তু সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে এই খাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হওয়া উচিত ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা। আশা করছি মজুরি বোর্ড সব পক্ষের প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। 

ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মালেক বলেন, সিপিডির প্রস্তাবটি তাদের আকাক্সক্ষার সঙ্গে মেলেনি। তবু সংস্থাটির প্রতিবেদনে এ খাতের সার্বিক অবস্থা উঠে এসেছে। আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। ইতোমধ্যে প্রস্তাবটি মালিকপক্ষ ও মজুরি বোর্ডের কাছে দেওয়া হয়েছে। 

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, চামড়া খাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে সিপিডির এমন প্রস্তাব কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কারণ, ডলারের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বিপরীতে রপ্তানিতে চামড়ার ইউনিট মূল্য কমেছে। তবে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য একটি মজুরি নির্ধারণ করা হলে সেটি বিবেচনায় নেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি। 

ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা বলেন, বোর্ডে আলোচনা করে দেখা হবে মজুরি কতটা বাড়ানো সম্ভব। যাতে শিল্প টিকে এবং শ্রমিকরাও বেঁচে থাকেন সেটি বিবেচনায় রেখে বাস্তবায়নযোগ্য একটি বেতন কাঠামো দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। 

আইএ