ঘূর্ণিঝড় রেমাল

বিদ্যুতে ক্ষতি ১০০ কোটি, অর্ধেক মোবাইল টাওয়ার অচল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৪, ১০:১৬ পিএম

ঢাকা : ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ এর প্রভাবে দীর্ঘসময় ধরে উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২ কোটি ৭১ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে । এছাড়া প্রবল ঝড়-বৃষ্টির কারণে রাষ্ট্রায়ত্ব দুই বিদ্যুৎ বিতরন কোম্পানির বৈদ্যুতিক তার ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্টের ফলে অন্তত ১০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। 

এদিকে বিদ্যুৎ না থাকা এবং ঝড়ের প্রভাবে দেশের মোট মোবাইল টাওয়ারের প্রায় ৪৯ শতাংশ অচল হয়ে পড়ায় ওইসব এলাকায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে দূর্যোগপূর্ন এলাকার মানুষেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। 

রোববার (২৬ মে) রাত থেকেই অনেকে ফোনে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

খুলনায় ১২ গ্রাম প্লাবিত, ৭৬ হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্তখুলনায় ১২ গ্রাম প্লাবিত, ৭৬ হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মোবাইল কোম্পানিগুলো বিকল্প উপায়ে নেটওয়ার্ক চালু রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে অনেক এলাকার বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় গাছ পড়ে লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে সরবরাহ বন্ধ হয়েছে। 

[224326]

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপ প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন জানান, ঝড়-বৃষ্টির কারণে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) অধীন ৮০ টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে ৬৫টি সমিতির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যহত হয়েছে। এর ফলে কোথাও আংশিক বা সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সবমিলে ২ কোটি ৬৬ লাখেরও বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। ঘুর্ণিঝড়ের কারণে বৈদ্যুতিক পোল, ট্রান্সফরমার, তার, ইন্সুলেটরসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ায় প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্টানটির ৭৯ কোটি ২ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

অন্যদিকে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)’র আর্থিক ক্ষতির পরিমান প্রায় ৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ঘূর্নিঝড়ের প্রভাবে ওজোপাডিকোর অন্তত ৪ লাখ ৫৩ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় রয়েছে। তবে দুটি প্রতিষ্টানেরই আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়তে পারে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (পরিচালন ও বিতরণ) দেবাশীষ চক্রবর্তী গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৭ টার দিকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমাদের টিম প্রস্তুত রয়েছে। কয়েক জায়গায় ইতোমধ্যে মেরামত কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তীব্র ঝড় আর বৃষ্টির কারণে পুরোদমে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। আশা করছি ২-৩ দিনের মধ্যে বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। তবে পুরোটা স্বাভাবিক হতে সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে। 

বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় পিডিবি’র গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পিডিবির উৎপাদন ছিল ১৩ হাজার ৫৬০ মেগাওয়াট। সোমবার বিকেল ৩টায় এর উৎপাদন নেমে এসেছে ৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে।

এদিকে ঘুর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে গভীর সমুদ্রে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হলেও সেটি এখন স্বাভাবিক। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে স্থাপনাসমূহের কোন ধরনের ক্ষতি হয়নি। গ্যাস সরবরাহ আস্তে আস্তে বাড়িয়ে গতকাল দুপুর থেকে তা ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে।

অর্থেক মোবাইল টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্থ: বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি) জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ৬৪ জেলাতেই মোবাইল টাওয়ার কমবেশি অচল হয়ে গেছে। দেশজুড়ে ৪৫ হাজার ৬১০ টি মোবাইল টাওয়ারের মধ্যে অচল হয়েছে ২২ হাজার ২১৮ টি টাওয়ার। নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য মোবাইল কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

মোবাইল ফোন অপারেটরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, উপকূলে ঝড় শুরুর আগে রোববার সন্ধ্যা বেলাতেই অনেক এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। টাওয়ারগুলোতে চার ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাটারির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেক এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে চলে গেছে। এছাড়া ঝড়ের কারনেও অনেক টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন এলাকা দ্রুত সংযোগের আওতায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

এমটিআই