আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি চামড়ার দাম কম কেন?

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৪, ০১:২২ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকা: একটা সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে কোরবানির চামড়া সংগ্রহ নিয়ে মারামারির ঘটনা প্রায়ই খবরের শিরোনাম হতো। তবে এক দশক আগের সেই চিত্র এখন মানুষ ভুলতে বসেছে। এখন কোরবানির চামড়া নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও কেউ চামড়া নিতে আসে না। বাধ্য হয়ে অনেকেই চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন। মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করেছেন। মূলত সিন্ডিকেটের কারণে কোরবানিদাতারা চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না।

ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ গরুর চামড়া সংগ্রহ করে ট্যানারিগুলো, যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক আসে কোরবানির সময়। এই হিসাবে প্রায় ৬০ লাখ চামড়া সংগ্রহ হয় কোরবানির সময়ে। ট্যানারির মালিকরা জানিয়েছেন, গতকাল পর্যন্ত গড়ে ৮০০ টাকা দরে গরুর চামড়া কিনেছেন। এই হিসাবে ৬০ লাখ চামড়ার দাম প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা।

[225899]

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের এত বড় বাজার থাকার পরও ২০১৭ সাল থেকে কোরবানিদাতারা দাম পাচ্ছেন না। সিন্ডিকেট ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি চামড়ার দাম না পাওয়া একটি বড় কারণ বলে জানিয়েছেন চামড়া খাত সশ্লিষ্টরা। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (সিইটিপি) পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় ট্যানারিগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘এলডব্লিউজি’ সনদ পাচ্ছে না। ফলে চামড়ার সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র- ইউরোপের ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশি চামড়া কিনছে না। বাধ্য হয়ে চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার মতো বাজারে স্বল্পমূল্যে জামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে স্থানীয় ট্যানারিগুলো। যদিও বাংলাদেশ থেকে সেমি ফিনিশড চামড়া আমদানি করে ওই সব দেশ ইউরোপ-আমেরিকায় কয়েক গুণ বেশি দামে তা বিক্রি করছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) মহাসচিব হাজি টিপু সুলতান বলেন, আসলে বৈশ্বিক প্রভাব পড়েছে চামড়া খাতের ওপর। আমাদের চামড়াপণ্যের ১০ শতাংশ বাজার দেশীয়, বাকি ৯০ ভাগ রপ্তানি করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখেই কিনতে হবে। চামড়ার বাজারে এখন প্রভাব ফেলছে কৃত্রিম চামড়া। চীনারা এশিয়ার দেশগুলোয় মানিব্যাগ থেকে শুরু করে সব কৃত্রিম চামড়ায় সরবরাহ করছে। এতে চামড়ার বাজার পড়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে এই শিল্পের ওপর।

এ বিষয়ে সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, কমপ্লায়েন্স ইস্যুর কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের চামড়ার দাম কম। সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরীর সিইটিপি পুরোপুরি চালু না হওয়ায় অনেক ট্যানারির সক্ষমতা থাকার পরও এলডব্লিউজি সনদ পাচ্ছে না। আর এই সনদ না পেলে ইউরোপ, আমেরিকায় চামড়া রপ্তানি করা যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে কম দামে চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো দেশে বিক্রি করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালে প্রতিটি গরুর চামড়া প্রক্রিয়া করতে কেমিক্যাল খরচ ছিল গড়ে প্রায় ৫০০-৬০০ টাকা। ডলার ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে কেমিক্যালের দাম বাড়ায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ চামড়ার দাম ও বিক্রি কমে গেছে। গত বছরের ফিনিশড লেদারের ৩০-৪০ শতাংশ চামড়া এখনো অবিক্রীত রয়ে গেছে। 

প্রসঙ্গত, রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে চামড়াশিল্পকে দূষণমুক্ত পরিকল্পিত শিল্পনগরে স্থানান্তরের জন্য ২০০৩ সালে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। ২১ বছরেও এই চামড়াশিল্প নগরকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা যায়নি। সাভারের হেমায়েতপুরের ২০০ একর জমিতে গড়ে ওঠা এই চামড়াশিল্প নগরের সিইটিপি পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় পাশের ধলেশ্বরী নদী দূষণের শিকার হচ্ছে।

এসআই