ঢাকা: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের একান্ত সচিবরা। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টাকে ম্যানেজ করে অনেকেই আবারও একান্ত সচিব পদটি বাগিয়ে নিয়েছেন। মন্ত্রণালয়গুলোতে আওয়ামী আস্থাভাজন পিএসরা বহাল থাকায় দপ্তর/অধিদপ্তর এমনকি মাঠ প্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এসকল একান্ত সচিবদের সরিয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
[231318]
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বর্তমান স্থানীয় সরকার বিষয়ক উপদেষ্টা এ এফ এম হাসান আরিফ-এর একান্ত সচিব হয়েছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। আওয়ামী লীগ শাসনামলের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ঐ ব্যাচের সভাপতি ছিলেন। শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এই কর্মকর্তা ২০১০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী মির্জা আজমের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের একান্ত সচিব হিসেবে যোগ দেন।
এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলামের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
[231316]
সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ব্যাচের সভাপতি ক্ষমতা অপব্যবহার করে মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন তার ব্যাচের প্রায় ২৫ জন ডিসি এবং তার অনুগত আরও প্রায় ২০ জন মোট ৪৫ জন ডিসিকে দিয়ে আন্দোলন দমানোর পিছনের কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন।
পুনরায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ থাকলে সহজেই তার মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ, ৩৩২টি পৌরসভা, ১২টি সিটি কর্পোরেশনসহ সারাদেশের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইন্ধন দিয়ে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে যে কোন ষড়যন্ত্র হতে পারে।
সূত্র জানায়, তাকে একান্ত সচিব করার পেছনের কারিগর স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান। তিনি উপদেষ্টা এ এফ এম হাসান আরিফকে ম্যানেজ করে নাছির উদ্দিনকে একান্ত সচিব করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি ডিও লিখিয়ে এবং জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিবকে ফোন করিয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন।
[231312]
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান। আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন এই কর্মকর্তা ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের মকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছিলেন। এরপর ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত শেখ হাসিনার কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসময় তিনি মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দীর্ঘ সময় আস্থার সাথে শেখ হাসিনার দায়িত্ব পালন করায় তাকে উপহার স্বরুপ ২০২১ সালে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এমন চিহিৃত আওয়ামীপন্থী সুবিধাভোগী কর্মকর্তাকে উপদেষ্টার একান্ত সচিব নিয়োগ দেওয়ায় খোদ তার মন্ত্রণালয়েই সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টার একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৯ ব্যাচের জাহিদুল ইসলাম। আওয়ামী প্রশাসনের আস্থাভাজন হওয়ায় এই কর্মকর্তা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জননিরাপত্তা বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। সাবেক এসবির প্রধান মনিরুল ইসলামের স্ত্রী ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এই কর্মকর্তা।
নারায়ণগঞ্জের এডিসি এবং মুন্সীগঞ্জ-এর শ্রীনগরের ইউএনও থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে আর্থিক ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগ উঠে। এরকম একজন দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টার একান্ত সচিব নিয়োগ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
এসআই/আইএ