ঢাকা: আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যেই পিলখানায় বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
উপদেষ্টা বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তে পাঁচ থেকে নয় সদস্যের এ কমিটিতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, প্রশাসনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা থাকবেন।
গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই বিডিআর হত্যার পুনঃতদন্তের দাবি ওঠে। তখন বিডিআর হত্যার পুরো ঘটনার তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠনের কথা জানায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ বিষয়ে দুটি মামলা বিচারাধীন থাকায় কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। গত রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।
[239842]
এর প্রতিক্রিয়ায় গতকাল সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতে ‘কমিশন গঠনে গড়িমসি করে’ সরকার দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বলে মন্তব্য করে আইন উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও করার ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এই কর্মসূচি শুরু হবে বলেও এক ফেসবুক পোস্টে জানান তিনি। পরে তার সেই ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করে তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। এমন ঘোষণার এক দিনের মাথায় কমিটি গঠনের বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বদ্ধপরিকর। এই লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে আমি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনর্তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে সোচ্চার ছিলাম, এখনও রয়েছি। এ বিষয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রথমবার এবং গত ৪ নভেম্বর বিজিবি সদর দফতর পরিদর্শনকালে দ্বিতীয়বার ঘোষণা দিয়েছিলাম; যা বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ঘটনায় প্রথমে রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে এসব মামলা নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
এ ছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বিচার চলাকালে তৎকালীন বিডিআরের ডিএডি রহিমসহ চার আসামির মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী এ বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয় রক্তক্ষয়ী ওই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে।
এসআই