৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনপ্রধানের অপসারণ দাবি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৭:৩৬ পিএম

ঢাকা: প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের প্রতিবাদ সভা থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর পদত্যাগের দাবি তোলা হয়েছে। বুধবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এখনো তাদের সুপারিশ জমা দেয়নি। তবে সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারের উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করা হবে। 

এর পর থেকেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা। তারা সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশের প্রস্তাবকে বৈষম্যমূলক, অযৌক্তিক, ষড়যন্ত্রমূলক উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

সেই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা যৌথ প্রতিবাদ সভা করেছেন। 

এ সভায় সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়। ‘জনপ্রশাসনের সংস্কারকে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করে দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে যৌথভাবে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, উচ্চ আদালতের একটি মীমাংসিত বিষয়ে এ ধরনের প্রস্তাব সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত।

বর্তমানে প্রশাসন ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব হতে পারেন। এই পদে পদোন্নতির বিষয়ে কোটা নিয়ে উচ্চ আদালতের একটি রায়ও আছে। উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়। বর্তমানে কর্মরত উপসচিবের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬০০।

এখন সরকার গঠিত জনপ্রশাসন প্রশাসন সংস্কার কমিশন এই উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে। একই সঙ্গে কমিশন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে না রেখে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো আলাদা করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে।

কিন্তু বিষয়টি সামনে আসার পর থেকে প্রতিবাদের পাশাপাশি আন্তক্যাডার দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। এমন সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে প্রশাসন ক্যাডারের পদোন্নতির কোটা কমে যাবে বলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এই ক্যাডারে কর্মকর্তা রয়েছেন ছয় হাজারের বেশি। তাদের এখন দাবি, সহকারী কমিশনার (শুরুর পদ) থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত পদগুলোর সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অর্থাৎ প্রশাসনের শতভাগ পদ হতে হবে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য। এ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের দাবিতে গত রোববার সচিবালয়ে বড় জমায়েত করেন।

এরই মধ্যে আবার সরকারের উপসচিব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল, নিজ নিজ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ নীতিনির্ধারণী পদে দায়িত্ব দেওয়া এবং সব ক্যাডার কর্মকর্তার সমান অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার ‘কলমবিরতি’ পালন করেছে ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’। 

আগামীকাল বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করারও ঘোষণা দিয়েছে তারা। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারও আলাদাভাবে মাঠে নেমেছে। তারা পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের দাবির কথা জানিয়েছে।

[240422]

এ রকম পরিস্থিতিতে আজ বড় রকমের প্রতিবাদ সভা করলেন প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা। এতে বর্তমানে কর্মরত কনিষ্ঠ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন। সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৯৭৩ ব্যাচের কর্মকর্তা পর্যন্ত প্রতিবাদ সভায় অংশ নেন। 

কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিয়াম মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। এ ছাড়া বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি হিসেবে ঢাকার বাইরের জেলা প্রশাসকেরা অনলাইনে এই প্রতিবাদ সভায় অংশ নেন। ঢাকার জেলা প্রশাসক সশরীর উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টার দিকে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ সভা চলে বেলা ৩টা পর্যন্ত।

সভায় বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর অপসারণ চাই। সরকার যদি অপসারণ না করে, কীভাবে অপসারণ করতে হবে, সেই হাতিয়ার আমাদের জানা আছে।’

বিসিএস পরিবারকে বাঁচানোর জন্য হয়তো আরও কষ্ট করতে হবে উল্লেখ করে আব্দুস সাত্তার আগামী ৪ জানুয়ারি মহাসমাবেশ করার প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে তিনি সহকারী কমিশনার (শুরুর পদ) থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত পদগুলোর সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানান।

প্রতিবাদ সভায় আরও একাধিক কর্মকর্তা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে কমিশন পুনর্গঠনের আহ্বান জানান। বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সোহেল রানা সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ইতিহাস ও নানা তথ্য তুলে ধরেন। একই সঙ্গে উপসচিবের পদটি শুধু যে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য হওয়া উচিত, তার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। উপসচিব পদ নিয়ে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটি বৈষম্যমূলক, অযৌক্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কারের মাধ্যমে জাতি হিসেবে নতুন যাত্রা শুরু করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশন গঠন করেছে সরকার। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে। চলতি মাসে তাদের সংস্কারের সুপারিশ চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

কঠোর কর্মসূচির হুমকি ও ছয় দফা
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ কঠোর কর্মসূচির হুমকি ও নিজেদের ছয় দফা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমরা এক আছি, এক থাকব। দ্বিতীয়ত, আমরা প্রশাসন ক্যাডারের ওপর কোনো রকমের সার্জারি বা কোটা আরোপ করতে দেব না। তৃতীয়ত, কমিশন কোনো অযাচিত সুপারিশ করলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। চতুর্থত, প্রশাসনে কোনো পর্যায়ে অন্ধভাবে বহিরাগত কাউকে বসানোর চেষ্টা করা হলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।

পঞ্চম, পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে বঞ্চিত কর্মকর্তাসহ সব ধরনের কর্মকর্তাকে সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ষষ্ঠত, দেশকে কোনোভাবে অস্থিতিশীল করার জন্য যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য প্রশাসন সারা দেশে সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করবে।’ এ সময় উপস্থিত কর্মকর্তারা তাতে সম্মতি দেন।
 
এআর