সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪, ০৯:৩৩ পিএম
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ছবি: সংগৃহীত।

ঢাকা: আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের চার মাস অতিবাহিত হয়েছে। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র কেপিআই বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি তলা প্রায় ৬ ঘণ্টা আগুনে পোড়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মচারীদের অদক্ষতা নাকি তাদের যোগসাজসে অর্ন্তবর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার চক্রান্ত এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

[240632]

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দায়িত্ব নেওয়ার ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও সচিবালয়ের নিরাপত্তায় পরিবর্তন আনতে পারেনি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার। সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবালয়ের নিরাপত্তা শাখা। এই শাখার দায়িত্বে ছিলেন ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুনের ছেলে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তা শাহে এলিদ মাইনুল আমিন। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর তাকে ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সময় থেকেই সচিবালয়ের নিরাপত্তায় উপ-পুলিশ কমিশনার এম তানভীর আহমেদ দায়িত্ব পালন করছেন। সরকার গঠনের চার মাসেও এই কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করতে পারেনি অর্ন্তবর্তী সরকার। স্ত্রী ফারহানা জাহান উপমা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

[240619]
 
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিদের তদবিরের মাধ্যমে সচিবালয়ের নিরাপত্তা শাখায় পদায়ন নেয় পুলিশ সদস্যরা। এসকল পুলিশ সদস্য এখনও বহাল তবিয়তে আছে। এদের মধ্যে দু‘একজনকে বদলি করা হলেও তদবির করে আবারও সচিবালয়ে এসেছে। 

আওয়ামী সরকারের সময় থেকেই সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন অর্ন্তবর্তী সরকারের কট্টর সমালোচক শহর ও যানবাহন শাখার পরিদর্শক শাহিনুর রহমান বিপি-৮৩১০১২৯২৪৯, পরিদর্শক আবু মুছা মো: ছালেহ আকন্দ বিপি-৮৬১১১৪৭৯৯২, উপ-পরিদর্শক আল মামুন বিপি-৭৮৯৭০১২৭৫২, উপ-পরিদর্শক হাসমত আলী, সহকারী উপ-পরিদর্শক হাফিজ, সহকারী উপ-পরিদর্শক মাহবুব, সহকারী উপ-পরিদর্শক ইকরাম, সহকারী উপ-পরিদর্শক মনিরুল, নায়েক প্রণব, কনসটেবল গাজীউর, মিজান, পারভেজ মোল্লা, সাজ্জাদ, আলমগীর, তরিকুল, যুবায়েল শেখ, কামাল।

এসকল পুলিশ সদস্য এখনও প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। নিজেকে এখনো হাসিনার লোক বলে আত্মতুষ্টিতে ভোগেন। ৩৬ জুলাইর শহীদদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে এবং সেই সময়ে পুলিশের নির্যাতন সঠিক ছিল বলে মন্তব্য করেন।

[240630]

সচিবালয়ে ভয়াবহ এই আগুন নিছক দুর্ঘটনা না কি নাশকতা, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার সন্দেহ ফায়ার সার্ভিস করলেও নাশকতা হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলছে আগুন নেভাতে আসা নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তার কথায়।

অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও এটাকে 'ষড়যন্ত্র' হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন। তবে ঘটনার সূত্রপাত বোঝার জন্য তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষার কথা বলেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিন দিনেই প্রাথমিক প্রতিবেদন মিলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সরকারের উপদেষ্টারা এবং আন্দোলনের পক্ষে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের 'দোসরদের' বিভিন্ন দপ্তরে 'ঘাপটি মেরে' থাকা ও তাদের 'ষড়যন্ত্রের' কথা বলে আসছেন। এমন প্রেক্ষাপটে অর্ন্তবর্তী সরকারের পাঁচ মাসের মধ্যে সচিবালয়ে মত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটল।

২০১৩ সালের কেপিআই নীতিমালায় বলা হয়েছে, কী পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই) হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত কোনো প্রতিষ্ঠান বা কারখানা বা জনস্বার্থে ব্যবহৃত স্থাপনা, যেগুলো দেশের যুদ্ধ সামর্থ্য অথবা জাতীয় অর্থনীতির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং যা ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের যুদ্ধ কিংবা প্রতিরক্ষা সামর্থ্য বা জাতীয় অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেপিআই চত্বরে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন এবং এর কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে নিকটতম ফায়ার সার্ভিসের সমন্বয়ে নূন্যতম বছরে দুই বার মহড়া করার কথাও বলা হয়েছে ওই নীতিমালায়।

এসআই/আইএ