বিতর্কিত ভোটার প্রসঙ্গে যা বললেন নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৫, ০৬:১২ পিএম

ঢাকা : হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেশে নতুন করে ভোটার হয়েছে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ জন। এ নিয়ে দেশে এখন মোট ভোটার ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জন। তালিকা অনুসারে পুরুষ ভোটার বেড়েছে। আর এবারই প্রথম প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম আওতায় আনা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

নির্বাচন কমিশনার জানান, এবারের হালনাগাদে ভোটার বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। হালনাগাদ খসড়া তালিকা অনুযায়ী, এখন দেশে মোট পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার ১০৩ জন। নারী ভোটার ৬ কোটি ৩ লাখ ৫২ হাজার ৪১৫ জন। হিজড়া ভোটার সংখ্যা ৯৯৪ জন।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, এবারই প্রথম প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সাতটি দেশে এখন পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম চালু হয়েছে। এর মধ্যে এশিয়ার পাঁচটি দেশ এবং ইউরোপের দুটো দেশ রয়েছে। 

প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমের আওতায় এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে ১৩ হাজার ১৫১ জনের। আবেদন করেছিলেন ৩৭ হাজার ৮৫০ জন। এর মধ্যে কিছু বাতিল হয়েছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন। যাদের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি, তদন্ত সাপেক্ষ তারাও নিবন্ধিত হয়ে যাবেন। তখন তারাও তালিকায় যুক্ত হবেন। 

[241005]

তিনি জানান, হালনাগাদ তালিকা নিয়ে কারও কোনো দাবি-আপত্তি থাকলে ১৭ জানুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে আবেদন করা যাবে। দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে আগামী ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।

বিতর্কিত ভোটার তালিকা প্রসঙ্গে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে এ কমিশন দায়িত্ব নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একটা শুদ্ধ ভোটার তালিকা ছাড়া কনফিডেন্স বোধ করছি না। এজন্যই বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই করা। 

প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, এ ভোটার তালিকা নিয়ে বিতর্ক বলছি আমরা বা শুদ্ধতার অভাব বলছি এটা মূলত তিনটি কারণে হয়েছে, একটা হচ্ছে মৃত ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ না পড়া, দ্বিতীয় হচ্ছে কোথাও কোথাও দ্বৈত ভোটার থাকার সম্ভাবনা, তৃতীয়ত হচ্ছে বিদেশি নাগরিক প্রতারণা করে ভোটার তালিকায় সংযুক্ত হওয়া। আমরা রিসেন্টলি একাধিক ইনসিডেন্ট পেয়েছি। 

চট্টগ্রাম এলাকায় রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারে সেজন্য একটা বিশাল ব্যবস্থাপনা আছে এবং ওই এলাকাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করে আলাদাভাবে ভোটার তালিকাভুক্ত করা হয়। এ কড়াকড়ি থেকে বাঁচতে ৩০ জন রোহিঙ্গা নীলফামারী সদরে গিয়ে ভোটার হয়েছেন। এগুলোর প্রমাণ আমাদের সামনে আছে। এভাবে আমাদের ভোটার তালিকা বিতর্কিত হয়েছে।

[241004]

নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, আমাদের মাঠপর্যায় থেকে অনেক সময় তথ্য পাই, যখন আমাদের তথ্য সংগ্রহকারী বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ করতে যায় সেখানে স্থানীয় কোনো ব্যক্তি আমাদের সহায়তা করেন না, সেখানে দেখা যায় নিজের ভোটার যারা আছে তাদের বয়স বাড়িয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেন। আবার দেখা যায় অন্য কারও ১৮-১৯ বছর হলেও ভোটার তালিকাভুক্ত হতে দেয় না। 

এর বাইরেও আরও অনেক ধরনের কারণ আছে তবে এগুলোই মূল। আমরা এবার সেভাবে সেনসিটাইজ করছি। ইতিমধ্যে আমাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার দুটো বিভাগ পরিদর্শন করেছে। আমরা কমিশনারও পরিদর্শনে বের হব। 

আমাদের ডিজি এনআইডিসহ আমাদের সচিবালয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও মাঠপর্যায়ে যাচ্ছেন সেনসিডাইস করছে। পাশাপাশি কমিশন প্রশিক্ষণের অন্তর্ভুক্ত করেছে। আমরা একটা সন্তুষ্ট জায়গা পৌঁছাতে পারব ভোটার তালিকার বিষয়টা নিয়ে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে ওভারলেপিং হবে কি না, জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার বলেন, সংস্কার কমিশন যে সংস্কার প্রস্তাব দেন না কেন, ভোটার তালিকা থাকা লাগবে। ভোটার তালিকা ছাড়া তো ভোট হবে না। আমরা মনে করি না ভোটার তালিকা সম্পর্কিত কোনো সমস্যা ফেস করব। এখানে কোনো ওভারলেপিং আছে বলে মনে করি না।

[241003]

মাঠপর্যায়ে ভোটারদের ভোগান্তির বিষয়ে বলেন, আমরা বিষয়টা সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছি। মাঠপর্যায়ে এনআইডি সেবা নিয়ে নাগরিকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। প্রায় চার লাখের কাছাকাছি এনআইডি সংশোধনের আবেদন পেন্ডিং ছিল। আমরা কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছেন তারা ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছেন। যাতে দ্রুততম সময়ে নাগরিকরা তাদের বৈধ সেবাটা পান। 

এ কথাও সত্য এসব আবেদনের ভেতরে একটা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রয়েছেন যারা প্রতারণার আশ্রয় নিতে চেয়েছেন, তাদের জন্য যেন সাধারণ নাগরিক ভোগান্তিতে না পড়েন, সেটার জন্য আরও ভালো পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছি অতি দ্রুত।

এমটিআই