ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ করা; দুইবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের অযোগ্য করা এবং একই ব্যক্তি একইসঙ্গে যাতে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদনেতা হতে না পারেন তার বিধান করার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
এছাড়া গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে কার্যকর করার লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনেই হবে নির্বাচন এবং সেই সরকারের মেয়াদ চার মাস করাসহ ১৬টি ক্ষেত্রে সুপারিশ জানিয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই সুপারিশপত্র জমা দেওয়া হয়।
[241858]
সুপারিশপত্রে বলা হয়, ‘সংশ্লিষ্ট সব আইন-কানুন ও বিধি-বিধানের পর্যালোচনা এবং অংশীজনের সঙ্গে ব্যাপক মতবিনিময় ও আমাদের সর্বোচ্চ বিবেচনার ভিত্তিতে সুপারিশগুলো প্রণয়ন করেছি।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের উল্লেখযোগ্য সুপারিশ গুলো হলো –
নির্বাচন ব্যবস্থা:
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধান বাতিল করা। কোনও আসনে মোট ভোটারের ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনর্নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বন্ধ করা, ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেওয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনে ‘না ভোট’র বিধান প্রবর্তন করা। নির্বাচনে না ভোট বিজয়ী হলে সেই নির্বাচন বাতিল করা এবং পুনর্নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাতিলকৃত নির্বাচনের কোনও প্রার্থী নতুন নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারার বিধান করা।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ:
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ করা; দুইবার নির্বাচত প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের অযোগ্য করা এবং একই ব্যক্তি একইসঙ্গে যাতে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদনেতা হতে না পারেন তার বিধান করা।
[241851]
সংসদের উচ্চকক্ষের নির্বাচন:
সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটেরহারের ভিত্তিতে (সংখ্যানুপাতিকভাবে) রাজনৈতিক দলের সদস্য ও বিশিষ্টজনদের সমন্বয়ে ১০০টি আসন নিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টি করা; কমপক্ষে ৩০ শতাংশ নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা; বিরোধী দলকে ডিপুটি স্পিকারের পদ দেওয়া।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা:
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ চার মাস নির্ধারিত করে এবং এ মেয়াদকালে জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন সম্পন্ন করা। এই সরকার কর্তৃক রুটিন কার্যক্রমের বাইরেও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিবিধানের সংস্কার এবং প্রশাসনিক রদবদলের বিধান করা। স্থায়ী ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল’ কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের নাম চূড়ান্ত করা এবং সরকারের প্রধান ও অন্য ২০ জন উপদেষ্টাকে নিয়োগের বিধান করা।
জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষের সদস্য এবং স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে দল নিরপেক্ষ, সৎ, যোগ্য ও সুনামসম্পন্ন ব্যক্তির রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার বিধান করা।
[241849]
স্থানীয় সরকার নির্বাচন
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জন্য একটি স্থায়ী ‘স্থানীয় সরকার কমিশন’ গঠন করা। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন করা।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন:
নতুন দল নিবন্ধনের শর্ত শিথিলের লক্ষ্যে ১০ শতাংশ জেলা এবং ৫ শতাংশ উপজেলা বা থানায় দলের অফিস এবং ন্যূনতম ৫ হাজার সদস্য থাকার বিধান করা। প্রতি ৫ বছর পর পর দলের নিবন্ধন নবায়ন বাধ্যতামূলক করা। দলের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র, শিক্ষক ও শ্রমিক সংগঠন, ভাতৃপ্রতীম বা যেকোনও নামেই হোক না কেন, না থাকার বিধান করা। পর পর দুটি নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান বাতিল করা।
প্রবাসী পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা:
প্রবাসীদের জন্য একটি তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তাসূচক পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থার করা। প্রস্তাবিত তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তাসূচক পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থার বাস্তবায়নকল্পে দুটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে ভোটার অ্যাপ এবং ভেরিফায়ার অ্যাপ যথাযথ ফাংশনালিটিসহ ডেভেলপ করা।
আইএ