ঢাকা : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল নয় বরং বহু লড়াই সংগ্রাম অতিক্রম করা, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির হাতে নেতাকর্মীদের হত্যা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়া দলটি ‘বাংলাদেশ’ নামক একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠিত করেছে। শুধু তাই নয়, সেই স্বাধীন দেশের জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন, যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশকে পুনর্গঠন এবং পরবর্তীসময়ে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির কাছ থেকে দেশকে পুনরুদ্ধার করে আলোর পথে পরিচালিত করা, বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা—এর সবকিছুই হয়েছে অসাম্প্রদায়িক মতাদর্শে বিশ্বাসী ঐহিত্যবাহী সংগ্রামী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের হাত ধরে। এটাই সত্য যে, অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগের হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ ও বাংলাদেশের জনগণের মুক্তি নিহিত।
২৩ জুন, ১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরবর্তীসময়ে এই রাজনৈতিক দলটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও বিশ্বের অন্যতম অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নামে পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বর্তমানে ৭২ বছর পূর্ণ করে ৭৩ বছরে পদার্পণ করল। আমি আমার লেখার শুরুতে দলটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করছি এবং বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান কারিগর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস, ঐহিত্য, লড়াই, সংগ্রাম এর সবকিছুই মানুষের জানা। সে কারণেই আমি অতি সংক্ষেপে দলটি ইতিহাস সম্পর্কে তুলে ধরছি। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান ধারণকারী দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতৃত্বে ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হক। ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামারিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৪-এর দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ১৯৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তর সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া, মুজিবনগরের সরকার গঠন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হারিয়ে নেতাকর্মীদের শোকের সাগরে ভাসা, বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে ঘুরে দাঁড়ানোর নিরন্তর প্রচেষ্টা, বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ এবং পরবর্তীতে নির্বাচনের মাধ্যমে জয়লাভ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার ১১ বছরেরও বেশি সময় জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন; পাশাপাশি টানা তৃতীয়বারের মতো ও বাংলাদেশের চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ জঙ্গিবাদ দমন, যুদ্ধাপরাধের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার ও খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা—এসবই আওয়ামী লীগের অতীত ও বর্তমান ইতিহাস।
বাংলাদেশ আজ মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২২২৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক রিজাভ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু ৭৫ বছর এবং পুরুষের গড় আয়ু ৭১ বছরে উন্নীত হয়েছে। আর দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা থেকে নেওয়া ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক দেশের স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব ঘটিয়েছে। আওয়ামী লীগ গৃহীত সঠিক নীতি অনুসরণ ও পদক্ষেপ নেওয়ার কারণেই দেশে শিশু মৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে, মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েছে, শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে, ছোঁয়াচে ও মহামারী রোগে মানুষের মৃত্যু অনেকাংশেই কমেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ আজ পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করছে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য উৎপাদন, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্পায়ন সর্বক্ষেত্রেই অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাতেই এদেশের জলপথ, স্থলপথ, আকাশ পথ সর্বত্রই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা মাননীয় সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মহাকাশে উড়ছে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ বিদেশি ঋণ নির্ভর জাতীয় বাজেট থেকে দেশকে মুক্ত করে বছরের পর বছর বাংলাদেশ আজ স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী বাজেট প্রদানে সক্ষম হয়েছে। সর্বশেষ ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬২১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় ও সরকার পরিচালনার সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
সুতরাং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩ বছরে পদার্পণে আমি বাংলাদেশের সকল জনগণকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আওয়ামী লীগের মতাদর্শের অনুসারী হিসেবে আমি গর্ববোধ করছি। কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনার সুযোগ পাওয়ায় বাংলাদেশ আজ অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটির চলমান উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক এবং জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থন নিয়ে ২০৪১ সাল পর্যন্ত যেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পান, স্রষ্টার দরবারে সেই প্রার্থনা করি।
লেখক : চেয়ারম্যান, বক্ষব্যাধি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়