ঢাকা : সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান বেতন গ্রেড ১৩তম। যা পূর্বে ছিল প্রশিক্ষণবিহীন ১৫তম ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১৪তম। সহকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল প্রধান শিক্ষকদের পরের ধাপে তাঁদের বেতন স্কেল নির্ধারণ করা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকগুলো সংগঠন রয়েছে।তাঁদের জনবল বেশি থাকা সত্তেও সংগঠনগুলোর মধ্যে দলাদলি থাকায় বরাবরই দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে তাঁরা।
প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সকল সংগঠনকে একত্রিত করার জন্য আমিসহ অনেকেই চেষ্টা করেছিলাম।চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলবনা।সবাইকে একত্রিত করতে না পারলেও সংগঠনগুলো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে মহাজোট ও ঐক্য পরিষদ নামে দুটি জোট গঠন হয়েছিল।
জোট আলাদা হলেও দাবি ছিল অভিন্ন। জোট দুটি প্রধান শিক্ষকদের ১০ম ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড প্রদানের লক্ষ্যে সরকারের সাথে লবিংসহ বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি জোরদার করে।কর্মসূচিগুলোতে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ ছিল ব্যপক। বিশেষ করে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঐক্য পরিষদের ডাকে জাতীয় শহীদ মিনারে লক্ষাধিক শিক্ষকদের অংশগ্রহণ সরকারকে ভাবিয়ে তোলে।
প্রধান শিক্ষকদের ১১তম, সহকারী প্রধান শিক্ষকদের ১২তম ও সহকারী শিক্ষকদের ১৩ গ্রেড প্রদানের ঘোষণা দেয় সরকার। উল্লেখ্য সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদটি সম্পূর্ণই কাল্পনিক।এর কোন অস্তিত্ব নাই। এই পদটি সৃষ্টি করার জন্য আমার জানামতে কোন কার্যকর পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়নি।মূলত সহকারী শিক্ষকদের পিছিয়ে রাখার জন্য এটা ছিল একটি কৌশল।
যাইহউক এখন মূল আলোচনায় আসি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের হাইকোর্টে রিট করার প্রেক্ষিতে তাঁদের ১০ম গ্রেড প্রদানের পক্ষে একটি যুগান্তকারী রায় আসে। এই রায় বাস্তবায়নের জন্য প্রধান শিক্ষক সমিতির নেতারা সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকার যদি রায়টি রিভিউ না করে তাহলে আমি আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা ১০ম (দ্বিতীয় শ্রেণি) গ্রেডে পদার্পণ করবেন।
বর্তমানে সহকারী শিক্ষকরাও তাঁদেরকে ১০ম গ্রেড প্রদান করার জন্য দাবি জানাচ্ছেন। অনেকেই মনে করছেন এই দাবি অযৌক্তিক। যেহেতু প্রধান শিক্ষকরা হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ১০ম গ্রেডে থাকবেন তাহলে সহকারী শিক্ষকদের গ্রেড ১০ম হবে কিভাবে! অর্থাৎ প্রধান ও সহকারী শিক্ষকদের গ্রেড একই হতে পারেনা।
এই জায়গায় একটু বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন রয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে থাকলে সহকারী শিক্ষকদেরও ১০ম গ্রেড প্রাপ্তিতে কোন বাঁধা নেই।যেহেতু সর্বশেষ নিয়োগ বিধি অনুযায়ী প্রধান ও সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা একই। তাই দুটি পদ একই গ্রেডভুক্ত হতে আইনগত কোন জটিলতা নেই।
প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের গ্রেড একই হলে প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দেওয়ারও কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ কোন কর্মকর্তা -কর্মচারী তাঁর পেশাগত দায়িত্ব পালন করে পদ দিয়ে গ্রেড দিয়ে নয়।
আরো সহজ ভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারগণ বর্তমানে ১০ম গ্রেডে অবস্থান করছেন। হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন হওয়ার পর প্রধান শিক্ষকরাও ১০ম গ্রেড পাবেন।শুধু তাই নয় উপজেলা শিক্ষা অফিসার(ইউইও) ও সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার(এডিপিইও) একই গ্রেড অর্থাৎ ৯ম গ্রেডে চাকরি করছেন। তাঁদের যদি প্রশাসনিক জটিলতা দেখা না দেয় তাহলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মাঝে প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দেওয়ার কোন সুযোগ বা সম্ভাবনা নেই।
পরিশেষ বলব, শিক্ষকরা হচ্ছে জাতি গঠনের কারিগর। এই কারিগরদের তৃতীয় শ্রেণি রেখে জাতির উন্নতি আশাকরা যায় না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদায় ১০ম গ্রেড প্রদানে আইনগত কোন বাঁধা নেই।সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছাই যথেস্ট।
লেখক :ফরিদ আহাম্মদ(শেরপুর জেলা শ্রেষ্ঠ শিক্ষক- ২০১৮),চিফ এডমিন,পিটিজি- প্রাইমারী টিচার্স গিল্ড।
E-mail : faridptg110@gmail.com