নাদিম হত্যাকাণ্ড

সাংবাদিকের কোনো বন্ধু হয় না

  • নিয়ন মতিয়ুল | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৩, ০৯:২৫ পিএম

ঢাকা : কোনো রাজনৈতিক দলের মতবাদ, দর্শন বা বিশেষ বিশ্বাসে ভর করা, অন্ধ হওয়া কিংবা দাসত্ব করা গণমাধ্যমের কাজ নয়। জনস্বার্থ ছাড়া বিশেষ মহল বা গোষ্ঠীর সেবায় নিয়োজিত হওয়াও এর চরিত্র নয়। গণমাধ্যমের মূল চালিকা শক্তি- সংবিধান, অনুমোদিত আইন-কাণুন আর সর্বজনস্বীকৃত বিধি-বিধান। একইসঙ্গে সময়ের দাবিতে সমাজের ইতিবাচক অগ্রসরধারার পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান। এর বাইরে যেকোনো ভূমিকাই গণমাধ্যমের জন্য বিপজ্জনক।

তবে বাংলাদেশে গণমাধ্যম ও এর বড়কর্তাদের বেশিরভাগই জনস্বার্থের চেয়ে রাজনৈতিক দল, মতবাদের দাসত্বে এক পায়ে খাড়া। এরা সংবাদমাধ্যম ও টকশোতে প্রতিদিন যে রাজনৈতিক বয়ান বিক্রি করেন তা যেমন পশ্চাৎমুখী, তেমনি বিরক্তিকর, একঘেঁয়ে। যা রাজনীতিতে মূল্যবোধের পচন ঠেকাতে সক্ষম নয়। ভোটারদের সম্মোহিত করা রাজনৈতিক ‘উন্নয়ন দর্শন’ নিয়ে এদের কোনো মাথা ব্যথাই নেই।

[199357]

২.
মূলত, রাজনৈতিক মতবাদে অন্ধ বিশ্বাসীদের হাত ধরেই সংবাদকর্মীদের ঐক্য বিভাজিত, খণ্ডবিখণ্ড । বিভিন্ন দলের ব্যানারে, দলীয় সেবাদানকারী হিসেবে গড়ে উঠেছে সংবাদকর্মীদের হাজার হাজার সংগঠন। সীমাহীন ‘পাওয়ার’ আর রাষ্ট্রীয় সম্পদ শোষণের সুবর্ণ সুযোগের ঝুলিয়ে রাখা মূলার দিকে তাকিয়ে প্রতিদিন টুকরো টুকরো হচ্ছে এসব সংগঠন। বন্ধুত্বের কৌশলে যে টুকরোগুলোকে টিস্যু পেপার বানিয়ে নিয়েছে দলগুলো।

আর, রাজনৈতিক তারকা সাংবাদিকদের অনেকেই রাজধানীর এসিরুমে সংবাদমাধ্যমের মুদি দোকান খুলে গ্রামে-গঞ্জে, পাড়ামহল্লায় ঝাঁকে ঝাঁকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী সংবাদকর্মী গড়ে তুলছেন। যারা ‘দক্ষিণা’র বিনিময়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রকৃত সাংবাদিকতাকে গলাটিপে ধরছে। যাদের ঝলকে ঝলসে গিয়ে ভালো সাংবাদিকদের পেশা ছাড়তে বাধ্য হতে হচ্ছে।

[194223]

৩.
বাস্তবে, প্রকৃত সাংবাদিকতায় অনবরত শত্রু তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক, কারো বন্ধু হওয়াই বরং অস্বাভাবিক। অথচ দেশে বড়সড় সাংবাদিকরা নিজেদের প্রভাব আর সাংগঠনিক নেতৃত্বের সুযোগে রাজনৈতিক নেতা, আমলা, প্রশাসক, শিল্পপতিদের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্বের মাখামাখিতে মজে আছেন। কঠিন, জটিল প্রশ্ন করা তো দূরের কথা মাথা নোয়াতে নোয়াতে তাদের মাথাই খসে পড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে, গণমাধ্যমের আসল চরিত্র আবিষ্কার করতে হলে সাংবাদিকদের সব সংগঠনকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে হবে। দল বা মতবাদের দেয়াল ভেঙে সম্মিলিত জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। কোনো দলের মতবাদ বা তাদের পরিচালিত সরকারের দাসত্ব নয়, জনস্বার্থেই ‘সুপার পাওয়ার’কে প্রশ্নবিদ্ধ করে উত্তর আদায় করতে হবে। তাহলেই গোলাম রব্বানি নাদিমসহ হাজারো সংবাদকর্মীর ওপর নির্বিচার হামলা, মামলা, খুনের লাগাম টানা সম্ভব হবে।

লেখক : সাংবাদিক
(১৭ জুন, ২০২৩। এলিফেন্ট রোড, ঢাকা)