আমাদের পুঁজিবাজার (পর্ব-৩)   

২০১০ এর মহাধস ও ব্যাংক এক্সপোজার লিমিট

  • মো. আলমগীর হোসেন  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৬:৩৪ পিএম

ঢাকা: বাংলাদেশের পুজিবাজারের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে যে প্রায় এক দশক বা তার কিছু কমবেশি সময় পর পর একটা তেজিভাব দেখা যায় এবং তার পর পরই বড় ধরনের পতন ঘটেছে। 

পতনের বৃত্ত থেকে কেন জানি আমাদের পুঁজিবাজার কোনো ভাবেই বের হতে পারছেনা। ২০১০ সাল অব্দি বাংলাদেশ ব্যাংক এর আইন অনুযায়ী যে কোনো ব্যাংক প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তার মোট ডিপোজিটের ১০% অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারত। 

অনেক ব্যাংক-ই এই বিনিয়োগ সীমা বহুলাংশে ক্রস করে অনেক উপরে চলে গিয়েছিল। ব্যাংক গুলো নিয়মিত বাংলাদেশ ব্যাংক এর অফসাইট সুপারভিশন ডিপার্টমেন্ট এ এই বিনিয়োগ তথ্য প্রতি মাসে দিত। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যাংককেই সতর্ক করেনি। 

২০১০ সালে পুঁজিবাজারের ভার্টিক্যাল ল্যান্ডিং যাকে বাংলায় বলা হয় খাড়া ভাবে পতন হল, যখন এই এক্সপোজার লিমিটকে সমন্বয় করার জন্য চাপ দেয়া হল। ব্যাপারটা এমন যে, আপনার সন্তান সিগারেট খাই, সেটা আপনি জানলেন কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিলেন না। ক্রমান্বয়ে আপনার সন্তান মদ, গাজা, খেতে খেতে যখন হিরোইন সেবন শুরু করল ঠিক তখন আপনার হুশ হল আর আপনি ব্যবস্থা নিতে গেলেন এবং যা হবার তাই হল। এক্সপোজার লিমিট সমন্বয়ে ঠিক এমনটাই হয়েছিল। পুঁজিবাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়ল।  

পরবর্তীতে আইন পরিবর্তন করে ব্যাংক এর নিজ ইকুইটির সর্বোচ্চ ৫০% বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হল। আর পুঁজিবাজারে বাজার মধ্যাস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান গুলো ইকুইটি নেভেটিভ নামক বিষ ফোঁড়ার জন্ম দিল, যা আজও অনেকেই এটাকে বহন করে চলেছে। এমনকি এই ইকুইটি নেগেটিভ এর পরিমাণ কোনো কোনো ব্যাংকের মূলধনকে পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছে।

[232607]

মানুষ ইতিহাস থেকে কোনো শিক্ষাই নেয়না, তার প্রমাণ ২০১০ এর পতনের পর বাজার ২০১৭  এবং ২০২১ সালে কিছুটা ব্রিদিং স্পেস দিলেও , ২০২২ এর ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধ, আরও নানা ইস্যুতে বাজার ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকে এবং মার্জিন লোনের হিসাব গুলিতে ইকুইটি কমতে থাকে। আইটেম ভিত্তিক বিনিয়োগ ইস্যুতে নতুন করে ইকুইটি নেগেটিভ বাড়তে থাকে। 

রেগুলেটরি ইনভেস্টিগেশনে বের হয়ে আসে অনেক ভয়াবহ চিত্র আর অনিয়ম। মুস্টিমেয় কিছু লোক লাভবান হলেও পুরা বাজার হুমকির মুখে পড়ে যায় ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের কারণে। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া ছাড়া কোনো উপায়ও ছিল না। এত লম্বা সময় ধরে ফ্লোর প্রাইস থাকাতে অনেকেই নানা রকম আর্থিক হুমকির মুখে পড়ে।

এমনকি অনেকেই এই ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার কারণে লস বুক করে অন্য শেয়ারে যেতে পারেনি বা তার প্রয়োজনে শেয়ার লসে বিক্রি করে টাকা নিতে পারেনি। ক্রমান্বয়ে সব শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হয়, ক্ষেত্র বিশেষ এ সর্বনিম্ন দর এ সার্কিট ব্রেকার আরোপ করা হয় বিনিয়োগকারীর স্থার্থে। 

ডিমিউচুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়া ও স্ট্রাটেজিক পার্টনার এর অনুপ্রবেশ:

অধিক জবাবদিহিতা আনয়নের লক্ষ্যে দেশের পুঁজিবাজার কে ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানি থেকে ২০১৩ সালে শেয়ারহোল্ডার মালিকানাধীন কোম্পানিতে রুপান্তরিত করা হয় এ ডি বি ( এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) এর পরামর্শ অনুযায়ী। শুধু তাইই নয় ডি এস ই এর মোট শেয়ারের ২৫% শেয়ার চীন এর কাছে বিক্রি করে তাদেরকে স্ট্রাটেজিক পার্টনার হিসাবে অন্তর্ভুক্তি করা হয়।

নতুন ট্রেকহোল্ডার অন্তর্ভুক্তি:

ডি এস ই তে ২০২১ সাল অব্দি ২৫০ জন স্টকব্রোকার ও স্টকডিলার বি এস ই সি এর লাইসেন্স নিয়ে কাজ করে আসছিল। ২০২১ সালের শেষ দিকে নতুন করে ৫৮ টি প্রতিষ্ঠানকে শুধুমাত্র ট্রেডিং কার্যক্রম চালানোর জন্য ১ কোটি টাকা লাইসেন্স ফি ও ৩ কোটি টাকা নিরাপত্তা জামানতের ভিত্তিতে স্টকব্রোকার ও স্টকডিলার লাইসেন্স দেয়া হয়, যেগুলির মধ্যে কিছু লাইসেন্সধারী সক্রিয় থাকলেও বেশিরভাগই নিস্ক্রিয় হয়ে আছে। সি এস ই ও ১৫ টির মত নতুন ট্রেক ইস্যু করে ঠিক একই শর্তে। চলবে....

লেখক: সি ই ও, বি আর বি সিকিউরিটিজ লিমিটেড।

এআর