চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুলশী থানাধীন ইউসেপ আমবাগান কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে এক পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে নগরীর পাথরঘাটা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এর আগে সকাল ১০টার দিকে নিহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম আলাউদ্দিন আলো (২৮)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক আলাউদ্দিন তালুকদার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টার দিকে নগরীর ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আমাবাগন ইউসেপ স্কুল কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পথচারী আলাউদ্দিন ঘটনাস্থলের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন। দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তার বুকের নিচে গুলি লাগে। মরদেহ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
এর আগে চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জে দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ৩৪ নং ওয়ার্ড আসাদগনজ ছোবাহানীয়া আলীয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এতে ২জন আহত হয়েছে। এসময় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকালে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড আসাদগনজ ছোবাহানীয়া আলীয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। এতে দুজন আহত হয়েছে। এ সময় ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। তবে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে গণমাধ্যমকে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি সকাল থেকে ভালো। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারপরও দেখছি।
চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে মেয়র ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ২২৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। এর মধ্যে ৩৯ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ১৬৯ জন। বাকি দুই ওয়ার্ডে ওই পদে নির্বাচন হচ্ছে না। সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ৫৭ জন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৪১ ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোট কেন্দ্রে তৈরি করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথ। এসব কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৭৭৫ প্রিসাইডিং অফিসার, ৪ হাজার ৮৮৬ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ৯ হাজার ৭৭২ পোলিং অফিসার। চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মোট সাত জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর, মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হাতি প্রতীকে খোকন চৌধুরী, চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ এবং হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম।
এবার চসিক নির্বাচনে ভোটার ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৩ ও নারী ভোটার ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩২৯ জন। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, ভোটগ্রহণের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা এবং ভোটের দিন রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি কোনো জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না।
এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে উৎসব-উত্তাপ থাকা সত্ত্বেও প্রার্থীদের প্রচারণার কারণে নগরবাসীকে কোনো ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। সড়ক বন্ধ করে মিছিল-মিটিংয়ে যেমন জনদুর্ভোগ হয়নি তেমনি মাইকের প্রচারণায় কান ঝালাপালাও হয়নি।
সকাল আটটা থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। চলবে বিকাল চারটা পর্যন্ত।
সোনালীনিউজ/এমএইচ