ঢাকা : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান জানিয়েছেন, ‘প্রেস সচিবের দায়িত্বপালনের বিনিময়ে কখনও কোনো পারিশ্রমিক বা সম্মানী নিইনি’।
গত ৫ এপ্রিল তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত দুদিনে অব্যাহতির বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি তিনি। তবে, বুধবার (৭ এপ্রিল) ফেসবুকে অব্যাহতি নিয়ে দীর্ঘ এক লেখা লেখেন মারুফ কামাল।
সেখানে তিনি দায়িত্ব পালনে পারিশ্রমিক না নেওয়া, বিএনপির দলীয় পদে না থাকা এবং বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
ফেসবুকে মারুফ কামাল লেখেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্রেস সচিবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে আমাকে বিএনপির তরফ থেকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার ব্যাপারে আমি নিরুৎসাহিত করেছিলাম। তবুও অনেকে মন্তব্য করেছেন। আবেগের আতিশয্যে কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কিছুটা কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্যও করেছেন। মানুষ পাথর নয়। তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থাকে, আবেগাক্রান্ত হয়। সময়ে এটা থিতিয়ে যাবে আশা করি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমি সকলের ভালোবাসায় অভিভূত। আলাদা করে সকলের মন্তব্যের জবাব দিতে না পারায় দুঃখিত। খুব অস্বাভাবিক এক সময়ে খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব হিসেবে আমার দায়িত্ব গ্রহণ ও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের গল্প সুযোগ পেলে আগামীতে কখনও বলব। তবে একটা কথা বলে রাখি, এটা কোনো চাকরি নয়, দলীয় পদও নয়। স্রেফ ম্যাডামের ইচ্ছাধীন একটা রাজনৈতিক সিলেকশন ছিল। আমাকে কেউ কোনো নিয়োগপত্র দেয়নি, শর্তও নির্ধারণ করে দেয়নি। সব ছিল মুখে মুখে, বিশ্বাস ও আস্থার ভিত্তিতে। আমি এই দায়িত্বপালনের বিনিময়ে কখনও কোনো পারিশ্রমিক বা সম্মানী নিইনি।’
তিনি লেখেন, ‘আমি একজন সামান্য লেখক-সাংবাদিক। আমার আগে আহমেদ নজির, আনোয়ার জাহিদ ও রিয়াজউদ্দীন আহমদের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা একইভাবে এই রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাদের কারও পরিচিতি ছিল সচিব, আবার কারও পরিচিতি উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন। এই দায়িত্বের বাইরে তাদের কেউ দলীয় পদে ছিলেন, কেউ ছিলেন না। আমাকে প্রেস সচিব পদের বাইরে দলীয় পদ নেওয়ার কথা বললেও আমি তা নিইনি। আমার নিজের সীমাবদ্ধতার কথা বুঝেই নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যেই সীমিত রেখেছি।’
ফেসবুকে মারুফ কামাল লেখেন, খালেদা জিয়ার মিডিয়া কভারেজ দেখভাল এবং তার বক্তব্য-বিবৃতি-লিখিত ইন্টারভিউর জবাবের মুসাবিদা (ড্রাফট) করার ব্যাপারে আমার ওপর অর্পিত এই দায়িত্ব পালনে সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়ন অন্যরা করছেন, করবেন। এ নিয়ে আমার মন্তব্য করা অনুচিত হবে। নিজের ঢোল নিজেই পেটানোকে খুব অরুচিকর প্র্যাকটিস বলে মনে করি। ১/১১-এর সময় বিবেকের তাড়নায় ও আদর্শবোধের তাগিদ থেকে যেটুকু করেছি, সে ব্যাপারেও নিজের কৃতিত্ব জাহির করাকে অনুচিত মনে করি। তবে সময় ও সুযোগ হলে সে সময়কার অপ্রকাশিত অনেক ঘটনাবলী কখনও লিখে জানাব।
অব্যাহতির চিঠির টেকনিক্যাল-পদ্ধতিগত দিক এবং এতে চয়ন করা শব্দ-বাক্য নিয়েও কোনো আপত্তি নেই বলে উল্লেখ করে সদ্য সাবেক প্রেস সচিব বলেন, ‘আমি একটি ক্লোজড চ্যাপ্টারকে ডিসেকশন (ব্যবচ্ছেদ) না করাই উচিত বলে মনে করি। এর পুনর্বিবেচনাও চাই না। ব্যক্তির মূল্যায়নের চেয়ে দল-রাজনীতির সাফল্যকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করি। আবারও বলি, অব্যাহতির ব্যাপারটাকে আমি দারুণ পজিটিভলি নিয়েছি। আমার মন একরত্তিও খারাপ হয়নি। আমি মনে করি, অনেক সময় আশীর্বাদ আসে অভিশাপের মুখোশ পরে। আমার কাছে এটা পুরোই আশীর্বাদ।’
তিনি আরও লেখেন, “আমি যার জন্য কাজ করতাম, তিনিই বেড়াজালে পড়ে বাধ্যতামূলকভাবে আজ সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন। কাজেই আমার এমনিতেই কাজ ছিল না। এ অবস্থায় আদর্শগত বিশ্বাস থেকে যা করা দরকার ও সম্ভব, সে লেখালেখিটুকু তো করছি। বাড়তি যে 'প্রেস সচিব' স্টিকারটি আমার গায়ে সেঁটে ছিল, বর্তমান অবস্থায় আমার স্বাধীনতা হরণ ছাড়া সেটির আর তেমন কোনো কার্যকারিতাই ছিল না। তাছাড়া এটি হয়ে উঠেছিল কোনো-কোনো মহলের চরম ঈর্ষা ও বিদ্বেষের উৎস। এ পরিস্থিতি থেকে আমাকে নিষ্কৃতি দেওয়ায় সত্যিই আনন্দিত।”
‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে দায়ের করা অসংখ্য মিথ্যা মামলায় জর্জরিত’ বলে উল্লেখ করে মারুফ কামাল ফেসবুকে আরও লেখেন, ‘আর্থিক দৈন্য আমার বরাবরই ছিল, সেটাকে কখনও গ্রাহ্য করিনি, আজও করি না। তবে শাসকের ক্রোধে আমার পারিবারিক জীবন ছত্রখান হয়ে গিয়েছে। এই সংকট অতিক্রমের লড়াইটা এখন আমাকে একলাই চালাতে হবে, হারজিত অনিশ্চিত। কখনও মাথা না নুইয়ে যেভাবে জীবনভর আদর্শিক সংগ্রাম চালিয়েছি, জীবনের বাকি দিনগুলোতে ব্যক্তিগত লড়াইটাও যেন সেভাবেই চালিয়ে যেতে পারি।’
সোনালীনিউজ/এমএএইচ