ঢাকা : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন শুনানীর রায় বিলম্বের ঘটনা ওল্ড প্র্যাকটিস। এটাই রাষ্ট্রের বর্তমান চরিত্র’।
বৃহস্পতিবার (২০ মে) বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘কোথায় যাবেন, জুডিশিয়ারি? আজকে রোজিনা ইসলামের জামিনের শুনানী হয়েছে। রায় দেবে রোববার। সেইম ওল্ড প্র্যাকটিস। এখানে ড. খন্দকার মোশাররফ আছেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমাদের সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ আছেন। আমাদের সঙ্গে যে কী আচরণ করার হয়, সেটা তো আমরা ধর্তব্যের মধ্যে নিই না। যে আমরা রাজনীতিবিদ, আমাদের প্রাপ্য-এটা হবে। কিন্তু দ্যাটস দ্যা রিয়েলিটি। এই জিনিসটা আমাদের বুঝতে হবে, এটাই এ রাষ্ট্রের চরিত্র। এই রাষ্ট্র যারা শাসন করছেন, তারা রাষ্ট্রকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার বাকশাল প্রতিষ্ঠার জন্য তারা অতীতেও করেছিলেন, সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন’।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের যে, আজকে আওয়ামী লীগের মতো একটি দল যারা একসময় জনগণের ভিত্তি ছিল, তারা জনগণের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছেন তাদের কাছে এখন জনগণ কেউ নয়। তারা জনগণের পাশেও নেই। তাদের এখন কাজী জেবুন্নেসার মতো আমলা অথবা পুলিশ, র্যা এই ধরনের সম্প্রদায়কে নিয়ে তাদের টিকে থাকতে হচ্ছে। এটা একদিকে যেমন লজ্জার, ধিক্কার, আরেক দিকে তেমনি ভীতিরও। আজকে ফ্যাসিবাদী ভীতি ছড়িয়ে সমস্ত দেশকে একেবারে একটা অন্ধকারের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সেই ফ্যাসিবাদকে আমাদের পরাজিত করতে হবে, সেটাই একমাত্র মুক্তির পথ। সংগ্রাম-আন্দোলন এবং মুখোমুখি হওয়া, এটা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প পথ নেই’।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রোজিনা ইসলামের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সামগ্রিক যে বাংলাদেশের আজকে চেহারা, সেই চেহারার একটা অংশ। সি ইজ নট অনলি দ্য ভিকটিম, এখানে ধারাবাহিকভাবে ইতিপূর্বে এই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একের পর এক এই সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন নেমে এসেছে, সংবাদপত্র, গণমাধ্যমের ওপর নির্যাতন নেমে এসেছে, সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং সাংবাদিকদের দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে, হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের যে চিত্র সেই চিত্র কিন্তু শুধু সংবাদপত্রের জন্য নয়, বাংলাদেশের মানুষের জন্যে অত্যন্ত ভীতিকর একটা চিত্র। আজকে দেখুন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তারা কিন্তু একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। সেই লক্ষ্যটি হচ্ছে, দেশে এমন একটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনগণের কোনো বক্তব্য থাকবে না, ভিন্নমত ধারণ করবার, পোষণ করবার কোনো উপায় থাকবে না’।
তিনি বলেন, ‘সে জন্য তারা সংবিধানকে কেটে-ছেঁটে তাদের মতো করে নিয়েছে, দুর্নীতির চিত্র যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য গণমাধ্যমের ওপর আঘাত করে চলেছে। আজকে একদিকে যেমন সংবাদপত্রের ওপর আঘাত আসছে অন্যদিকে মানুষের অধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের ওপরও আঘাত আসছে চরমভাবে’।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যারা জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন, যারা রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন তাদের কারারুদ্ধ করা হচ্ছে অথবা তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। দেখুন নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রী অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীকে, তার একটা ফেক একটা অডিও তারা সংবাদমাধ্যমের মধ্য দিয়ে ছেড়ে দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে, তিনবার তাকে রিমান্ডে পাঠিয়েছে। এখন পর্যন্ত তাকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না।
একইভাবে আমাদের চার-পাঁচ শ নেতাকর্মীকে... গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় আসা নিয়ে যে নারকীয় ঘটনা সরকার ঘটাল, তার মাধ্যমে এ দেশের আলেম-ওলামা, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করল তা এখনো অব্যাহত রেখেছে’।
রোজিনা ইসলামের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যখন আমাদের লোকজনদের ধরে নিয়ে যায়, যখন রিমান্ডে দেয়, যখন মারদধর করে, নির্যাতন করে, গুম করে, খুন করে তখন আমরা দেখি যে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক সংবাদমাধ্যম সেগুলো সম্পর্কে নীরব থাকে। কেউ কেউ আবার আপনার ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে সেটাকে ডিফেন্ড করে। এই জিনিসগুলো কিন্তু ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। আজকে কেন এই অবস্থা’?
তিনি বলেন, ‘রোজিনা ইসলামের পক্ষে সব সাংবাদিকরা্ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন শুনলাম। আমি মনে করি, এ ঐক্য কতক্ষণ টিকবে? সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের পর দুই পক্ষই তারা একসঙ্গে রাস্তায় নেমেছিলেন। চার-পাঁচ দিনও যায়নি। একজন আপনার উপদেষ্টা হয়ে গেছেন সরকারের, আর কয়েকজন হালুয়া-রুটি দিয়ে তাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার কথাগুলো... দুঃখিত আমি স্পষ্ট করে বলছি’।
তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা হালুয়া-রুটির সন্ধানে থাকব, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই ফেভারের সন্ধানে থাকব, ততক্ষণ পর্যন্ত এই যে, রোজিনা ইসলামের মতো সাহসী সাংবাদিক, যারা নিজের জীবন বিপন্ন করে আজকে সত্য কথাগুলো তুলে ধরে তাদের রক্ষা করতে পারবে না–এটাই বাস্তবতা।
আজকে অলিউল্লাহ নোমান লন্ডনে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, আজকে মাহমুদুর রহমানকে দেশে ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে, শফিক রেহমানকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে, যে নির্যাতন তাদের ওপর হয়েছে’। ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি এটাও বলতে শুনেছি যে, মাহমুদুর রহমান কোনো সাংবাদিক নন, সম্পাদক নন, এটাও বলতে শুনেছি রহমান তো আসলে কোনো সাংবাদিক নন। ডাবল স্ট্যান্ডার্ড পরিহার করতে হবে’।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মানবাধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।
সোনালীনিউজ/এমটিআই