ঢাকা : সংসদে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেছেন, ‘আজকে আমরা অপহরণ-গুম-খুনের কথা বলছি। এই কিছুদিন আগে একজন আলেম নিখোঁজ হয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, খোঁজ নিচ্ছি। আজকে যদি তাকে ফিরিয়ে দিতে না পারেন এটা রাষ্ট্রের জন্য বড় ব্যর্থতা হবে। আমি বলবো, আদনানকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে। তার পরিবারের আহাজারি আপনাকে শুনতে হবে।’ এছাড়া খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবি জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাজেট অত্যন্ত বৈদেশিকনির্ভর এবং ৫০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ঘাটতির বাজেট। এ বাজেট বাস্তবায়ন এবং দক্ষতা এই করোনাকালে মোটেই সম্ভব নয়। মহাজোট সরকারের এটি ১৩তম বাজেট। এর আগে ১২টি বাজেট সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রের আর্থিক কাঠামোর দিকে দৃষ্টি দিতে গেলে সেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি তাকাতে হবে। আমি নিঃসন্দেহে বলবো, বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছে। সেখানে মাঝে মাঝে একটু খুলছে। আবার চোখ বন্ধ করছে। চোখ খুলেই দেখে দরবেশ বাবা চারদিকে ঘিরে আছে। তখন চোখ বন্ধ করে রাখে।’
সংসদে সরকারি দলের এমপিরা বাস্তব আলোচনা করেন না দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখন রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো দলিল নেই। মাননীয় স্পিকার এক্সাম্পল দেখাতে পারবো। সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলা হচ্ছে- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। আমরা কি আর সেই জায়গায় আছি? বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ মুসলমান, ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। আমাদের ধর্ম কোরআন। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, কোরআনে ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো স্থান নেই। সুতরাং আমি মনে করি সংবিধানে একটি বড় অসঙ্গতি রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারের যে অনুচ্ছেদগুলো রয়েছে- সেখানে সভা-সমাবেশের কথা বলা হয়েছে। সেগুলোর কি কোনো অস্তিত্ব আছে? আজকে ভিন্নমত প্রকাশের কোনো স্বাধীনতা আছে? ভিন্নমত প্রকাশ করতে পারছে? আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ যেটি নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে রাষ্ট্রকে সাংঘাতিকভাবে নাড়া দিয়েছে। আজকে রাষ্ট্রপতি নির্বাহী বিভাগের ৪৯/এ অনুচ্ছেদটি রয়েছে সেখানে যেকোনো দণ্ডিত আসামিকে রাষ্ট্রপতিকে মাফ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এই মহাজোট সরকার আমলে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন খুনি, দণ্ডিত আসামিকে মাফ করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত নাড়া দিয়েছে বিশ্বকে যে, কিছুদিন আগে আল জাজিরা অল প্রাইম মিনিস্টার ম্যান প্রতিবেদনটি। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এটিও সংবিধানের একটি অসঙ্গতি। আমি মনে করি- এই সংবিধানের ত্রুটিগুলো সংশোধন হওয়া দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আজকে সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কারণে মাত্র দুই বছর সাজা দিয়ে তাকে আপনি চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছেন না। বাংলাদেশে আজকে দণ্ডিত আসামিদেরকে আপনারা মাফ করে দিচ্ছেন। এটি হতে পারে না। আজকে এখানে (সংসদ) প্রধানমন্ত্রী আছেন। আমি আশা করবো- অবশ্যই তিনি তাকে (খালেদা জিয়া) সুচিকিৎসার সুযোগ দেবেন।’
জাতীয় সংসদের সরকারি ও বিরোধী দল একাকার হয়ে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরোধী দলনেতা বাইরে বলছেন, বিরোধী দলের কোনো মূল্য নাই। আর সরকারি দল তাদের কি কোনো মূল্য আছে? সরকারি দলের মন্ত্রীরা বরাবরই বলছেন- আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আমার কাছে কেউ অপরিহার্য নয়। এভাবে কি কোনো রাষ্ট্র চলতে পারে? সরকারি-বিরোধীদল সম্মিলিত মেধা শক্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের ৫০ বছর বয়স হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের কোনো কাঠামো বা নীতিমালা তৈরি করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। দরকার কি? এটাকে বিলুপ্ত করে দেন। ইতোমধ্যেই আমরা শুনছি, নির্বাচন কমিশনের এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেছে।’
দেশে সবার জন্য আইনের শাসন নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘৫০ বছর পর পাসপোর্ট থেকে আপনি ইসরায়েল শব্দটি বাদ দিলেন। নিঃসন্দেহে এটি অগ্রহণযোগ্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার জন্য অনুরোধ করবো।’
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন। কোন খুন হওয়া ব্যক্তি ইমরান কারাগারে। আর তাকে যে খুন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে তাকে ক্রসফায়ারে দেয়া হয়েছে। কয় দিন আগে পল্লবীতে দেখলাম একজন খুন হলো- তারপর খুনের আসামি ক্রসফায়ার হয়ে গেল। তাহলে বিচার কিভাবে হবে? মাননীয় স্পিকার আজকে আমরা মনে করেছিলাম- মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এটি বন্ধ হবে। সেদিন পুলিশপ্রধান, সেনাপ্রধান জাতির কাছে আশ্বস্ত করেছিল আর আমরা এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখতে চাই না। কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। এখান থেকে আমরা কখন ফিরে আসব?’
‘বাইরে যখন চলাফেরা করি তখন খুব লজ্জা লাগে’ দাবি করে এমপি হারুন বলেন, ‘আমাদের মুখে কাপড় দিতে হয়। অনেক ব্যক্তি আমাদেরকে উপহাস করে। তার বলেন- আপনারা সরকারি দলের মন্ত্রীদের ভাড়া করেছেন না-কি, কিছু কিছু মন্ত্রী বিএনপিকে নিয়ে সকাল-বিকাল কথা বলছে। মনে হচ্ছে- তারা আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির নেতা। তারা বিএনপির দায়িত্বশীল ব্যক্তি।’
এ সময় তিনি হেসে হেসে বলেন, ‘আমাকে সময় দেবেন স্পিকার। কারণ বিরোধী দলনেতা তো আমি।’ এ সময় সংসদে উপস্থিত থাকা মশিউর রহমান রাঙ্গা এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। মাইক ছাড়াই তিনি প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।
তখন হারুন বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার আমি আপনার প্রটেকশন চাই। স্পিকার রাঙ্গাকে আশ্বাস দেন- হারুনের এই কথাটি এক্সপাঞ্জ করা হবে।’ এরপর সংসদ শান্ত হলে আবার বক্তব্য শুরু করেন হারুন।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ