ঢাকা : স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে রাজনীতি করা হয় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, এটি বন্ধ হওয়া দরকার। যিনি বাঙালিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাকে অস্বীকার করা হয়। তার অবদানকে অস্বীকার করা হয়, বিকৃতি করা হয়, এটি যারা করে তাদের রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করতে হবে।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ক্লাবের আয়োজনে ‘ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এটা কোনো দেশে হয় না। নেদারল্যান্ডসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যারা নাৎসি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছেন তাদের ভোটাধিকার নাই। যারা সমর্থন করেছিল তাদেরও ভোটাধিকার নাই। দুঃখজনক হলেও সত্য স্বাধীনতার যারা বিরোধিতা করেছে তারা জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়ার কল্যাণে রাজনীতি করে, এমপিও নির্বাচিত হয়েছে, মন্ত্রী হয়েছে। যারা স্বাধীনতা অস্বীকার করে তাদের রাজনীতি চিরতরে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় এই বিতর্ক নিয়ে এগিয়ে যাব, এটা কাম্য নয়।
হাছান মাহমুদ বলেন, দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড হয়েছে। দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি নিয়ে এটা করা হয়েছিল।দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয়েছে।
মঞ্জুরুল ইসলাম বুলবুলের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের যে বিচার হয়েছে সেখানে সাক্ষীরা কি বলেছেন, আসামিরা কি জবানবন্দি দিয়েছে, কার সাথে কি মিটিং হয়েছে, জিয়াউর রহমানের সাথে কার কখন মিটিং হয়েছে। জিয়াউর রহমান কিভাবে তাতে সায় দিয়েছে, সহযোগিতা কিভাবে আসে সেগুলো সেখানে বর্ণিত আছে। আরও অনেক বই-পুস্তক বেরিয়েছে। কায়সার হামিদ আমাদের ফুটবলার, তার বাবা মিস্টার হামিদ। তিনি জিয়াউর রহমানের কোর্স মেট, তিনি বইয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। তার স্বচক্ষে দেখা ঘটনাপ্রবাহর প্রেক্ষিতে তিনি তা লিখেছেন। বঙ্গভবনে তার লাশ তখনও দাফন হয়নি, ভূরিভোজ হচ্ছে, জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কিভাবে খুনিরা ফিসফাস করছে এসমস্ত কিছু বইয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, কয়েকজন সেনা অফিসার বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। তারা সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হয়েছিল। কেউ যদি সেনাবাহিনী থেকে আউস্টেড হয়, তারা সেনানিবাসে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু তারা সেনানিবাসে গিয়ে টেনিস খেলতো, ব্যাডমিন্টন খেলতো। তারা কিভাবে এখানে আসলো জেনারেল শফিউল্লাহ যখন জিজ্ঞেস করল, তখন তারা বললো উপ-সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের অনুমতি নিয়ে আসছে। তারা টেনিস খেলতে গিয়ে ষড়যন্ত্রগুলো করতো। আজকে এইসব প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু একটা কমিশন গঠন করে হত্যাকাণ্ডের সবিস্তর জাতির সামনে উন্মোচন করা প্রয়োজন। আজকে যদি তা করা না হয়, তাহলে আজ থেকে ৫০, ১০০ বছর পর ইতিহাস রচিত হবে, কারা হত্যা করেছিল, বিচারে যাদের শাস্তি হয়েছিল তারাই কি শুধু যুক্ত ছিল।
এ সময় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের উদ্দেশ্যে সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড তদন্ত কমিশন গঠনের উপর জোর দিয়ে বলেন, আপনি শুধুমাত্র মন্ত্রী নন। আপনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও। আওয়ামী লীগ না থাকলে পঁচাত্তরের বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হতো না। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কুশীলব তাদেরও বিচার হবে না। ইতিহাসের সত্য জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য আমাদের এই কমিশনটি করতে হবে। অন্য সব কাজ চলছে, এ কমিশনের কাজ বন্ধ থাকতে পারে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এই কমিশন না করে গেলে আগামীতে নতুন প্রজন্মের কাছে ভিন্ন তথ্য হাজির হতে পারে।
আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড তদন্তের কমিশন গঠনের কথা আসে শুধু আগস্ট আসলেই। আগস্ট মাস শেষ হয়ে গেলে কমিশন আর হয় না। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, যারা নেপথ্যে ছিলেন তাদের সকলের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
আলোচনায় আরও যুক্ত ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক মাঈনুল আলম, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব ওমর ফারুখ প্রমুখ।
সোনালীনিউজ/এমটিআই