ঢাকা : ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে শাস্তির ভয় বা বহিষ্কার কোনো হুমকি-ধমকি দিয়েই দমানো যাচ্ছে না আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের। কোনো কোনো ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। কারণ নিজ দলের মন্ত্রী-এমপিদের ঘর থেকেই দাঁড়িয়ে যাচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
এদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপও নিতে পারছে না দলটি। যদিও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন বিদ্রোহী দমনে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের সরাতে বহিষ্কার ছাড়া আর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোট হতে যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে শুরুতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৯০০। পরে অবশ্য বেশকিছু বিদ্রোহী প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তারপরও বিদ্রোহী প্রার্থীর তালিকা বেশ দীর্ঘ। তাদের মধ্যে আছেন দলীয় এমপির আত্মীয়স্বজন ও উপজেলার প্রভাবশালী নেতারা।
বিদ্রোহী প্রার্থী হলে ভবিষ্যতে কখনও দলীয় প্রতীক পাবেন না, আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে এমন ঘোষণার পরও বিদ্রোহীরা থেমে নেই। বেশকিছু ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দলের উপজেলা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারাও।
রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার ১৬টি ইউপিতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তানোরের কলমা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। এখানে নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর চাচাতো ভাই ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খাদেকুন্নবী বাবু চৌধুরী।
পাবনা-২ আসনের (সুজানগর) সংসদ সদস্য ফিরোজ কবিরের ছোট ভাই আহমেদ ফেরদৌস কবির দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নৌকার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। অবশ্য পরে তিনি সরে দাঁড়ান। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে ওই উপজেলায় দলীয় মনোনয়নের বিরোধিতা করায় ১০টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী ১২ নেতা-কর্মীকে অব্যাহতি দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আটটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী ১৫ জন। খট্টেশ্বর রাণীনগর সদর ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজমুল হক। গোনা ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আরিফ রাঙ্গা এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আবু শায়েম শাহিন।
নওগাঁ সদর উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তিনজন। চন্ডিপুর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সদস্য বেদারুল ইসলাম মুকুল এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসলাম হোসেন।
শেরপুর সদর উপজেলার ১১টি ইউপিতে চেয়ারম্যান নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে ৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা।
দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমানের বড় ভাই ইসমাইল হোসেন কামারিয়া বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। একই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম সিদ্দিক।
জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামও রোহা ইউনিয়নে নৌকার বিরুদ্ধে লড়ছেন। জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সুরুজও চরশেরপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
লালমনিরহাটে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সাজেদা জামান। কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভার ইউনিয়নে সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।
সাজেদা জামান মন্ত্রীর ছোট ভাই কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহবুবুজ্জামান আহমেদের স্ত্রী। ওই উপজেলার মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
লালমনিরহাটের আদিতমারীর আটটি ইউপিতে নির্বাচন হবে। উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. রোকনুজ্জামান, বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মমতাজ উদ্দিন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় নেত্রকোনার আটপাড়া ও বারহাট্টা উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ১৮ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া সদর উপজেলার ১০ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই ২৮ জনের একজনও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি।
এদিকে ইউপি নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ইস্যুতে কোনো মন্তব্য করতে চাননি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। তিনি বলেন, দলীয় ফোরামে বিষয়গুলো আলোচনার পর এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব।
বিদ্রোহী ইস্যুতে সৃষ্ট সংকট সমাধানে কোনো কোনো জায়গায় চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখেই বিদ্রোহী দমনে আমরা কাজ করছি। হয়তো শতভাগ সফল হতে পারব না। তবে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। যেসব ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী বেশি, সেখানে সংশ্লিষ্টদের বুঝিয়ে মীমাংসা করা হচ্ছে। আর যেখানে পরিস্থিতি জটিল, সেখানে দলীয়ভাবে শাস্তির পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই